বাংলার মিষ্টির জয়জয়কার, বিষ্ণুপুরের মোতিচুর লাড্ডু পেল জিআই স্বীকৃতি
বাঙালির আহার তেতো দিয়ে শুরু হয়ে মিষ্টিতে এসে শেষ হয়। বাঙালিকে চেনা যায় মিষ্টিতেই। বাংলার মিষ্টি বাঙালির গর্ব। বাংলার মিষ্টি বিশ্বসভায় বাঙালির নাম উজ্জ্বল করেছে। বাংলার রসগোল্লা জগদ্বিখ্যাত। জয়নগরের মোয়া, বর্ধমানের সীতাভোগ, মিহিদানা, কৃষ্ণনগরের সরভাজা, সরপুরিয়া, মালদহের কানসাট, বীরভূমের মোরব্বা, বেলিয়াতোড়ের মেচা সন্দেশ, কাঁথির কাজু বরফি, মালদার রসকদম্ব, ক্যানিং-এর লেডিকেনি বাংলার মিষ্টির যেন শেষ নেই। বাংলার মিষ্টির আবারো হলো জয়জয়কার। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের মোতিচুর লাড্ডু পেল জিআই স্বীকৃতি।
লাড্ডুর সবচেয়ে প্রাচীন ও বিখ্যাত ভ্যারাইটি হল মোতিচুর লাড্ডু। কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজের গোবিন্দ লীলামৃত গ্রন্থে কৃষ্ণের পছন্দের খাবার হিসেবে মৌক্তিকাক্ষ নাড়ুর উল্লেখ পাওয়া যায়। এই মৌক্তিক শব্দের অর্থ হল মুক্তো, এর থেকেই মোতিচুর শব্দটি এসেছে। প্রাচীন বঙ্গদেশে বিষ্ণুপুরের মোদকদের বেশ সুখ্যাতি ছিল।
মল্ল রাজাদের উপাস্য দেবতা ছিল রাধাগোবিন্দ। যে কারণে মল্ল রাজারা রাধাগোবিন্দ পূজার প্রসাদ হিসেবে সুস্বাদু মিষ্টি তৈরির নির্দেশ দেন রাজ মোদক নামে এক মিষ্টি ব্যবসায়ীকে৷ ঐ ব্যবসায়ী পিয়াল গাছের বীজ সংগ্রহ করে তার বেসন তৈরি করে প্রস্তুত করেন মোতিচুর লাড্ডু। যা সেই সময় থেকেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷
মোতিচুর লাড্ডুর দাবিদার মল্লভূমের রাজধানী বিষ্ণুপুরই। দীর্ঘদিন ধরে জিআই স্বীকৃতির জন্য লড়াই করছিলেন বিষ্ণুপুরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বিভিন্ন সময় চিঠি পাঠান মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা। তাদের ওপর আস্থা রেখেছিল রাজ্য সরকার। ভারত সরকারের সাথে মোতিচুর লাড্ডুর জিআই ট্যাগ আদায়ের জন্য বহুবার কথা বলেছিল রাজ্য সরকার। তারপর মোতিচুর লাড্ডুর উৎপত্তি ও ইতিহাস সম্পর্কে সমস্ত নথি বিচার বিবেচনা করার পর জানা গেল মোতিচুর লাড্ডুর দাবিদার বিষ্ণুপরই। বিষ্ণুপুরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের লড়াই আজকে সফল হলো। বিষ্ণুপুরের গর্ব মোতিচুর লাড্ডু পেল জিআই স্বীকৃতি। যে খবরে বিষ্ণুপুর তথা বাংলার আকাশে-বাতাসে আনন্দের সুর। আবারো ভারতসভায় উজ্জ্বল হলো বাংলার মুখ।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment