কৃষিজাত পণ্য থেকে বাংলার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি, জিআই পেল বাংলার ৭ টি পণ্য
জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই তকমা পেল বাংলার সাতটি পণ্য। কৃষিজাত পণ্য থেকে শুরু করে বাংলার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি সবেতেই জিআই পেল বাংলা। যা বাংলার অর্থনীতিকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করে তুলবে। বিগত কয়েক বছরে বাংলার জিআই তালিকা ক্রমশ লম্বা হয়ে আসছে। জিআই ট্যাগের জন্য বাংলা দারুণ ভাবে লড়ছে।
জিআই পেতে গেলে সেই পণ্যের উৎপত্তিস্থল সেই এলাকারই হতে হবে। একটা পণ্য জিআই পেলে তার আন্তর্জাতিক প্রসার ঘটে। বাংলার পণ্যের যত বেশি আন্তর্জাতিক প্রসার হবে তত বেশি শক্তিশালী হবে বাংলার অর্থনীতি। বাংলার সাত সাতটি পণ্যে জিআই ট্যাগ পাওয়া বাংলা ও বাঙালির জন্য গর্বের মুহূর্ত।
যে সকল পণ্যের ওপর জিআই পেল বাংলা সেগুলো হলো--- বাংলার নলেন গুড়ের সন্দেশ, বিষ্ণুপুরের মোতিচুরের লাড্ডু, মুর্শিদাবাদের ছানাবড়া, কামারপুকুরের সাদা বোঁদে, রাঁধুনীপাগল চাল, বারুইপুরের পেয়ারা, ও মালদহের নিস্তারি সিল্ক সুতো৷ এই নিয়ে বাংলার ঝুলিতে এলো ৩৫ টি জিআই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পণ্য।
চলতি বছরে এতগুলো পণ্যের জিআই স্বীকৃতি লাভের পর যে সকল পণ্য দীর্ঘকাল ধরে জিআই এর জন্য আবেদন করা সত্ত্বেও এখনও জিআই স্বীকৃতি মেলেনি সেইসব পণ্যের জিআই পাওয়ার জন্য লড়াইটা আরও সহজতর হবে বলে মনে করছেন বাংলার অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
শোনা যায়, ব্রিটিশদের সন্তুষ্ট করার জন্য বহরমপুরের মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী ছানাবড়া প্রস্তুত করেছিলেন৷ মুর্শিদাবাদের ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টির ব্যবসায়ীরা ২০২২ সাল থেকে লড়ছেন জিআই-এর জন্য। তিন বছর লেগে থাকার পর অবশেষে ছানাবড়া ছিনিয়ে নিলো জিআই স্বীকৃতি।
মল্ল রাজাদের উপাস্য দেবতা ছিল রাধাগোবিন্দ। যে কারণে মল্ল রাজারা রাধাগোবিন্দ পূজার প্রসাদ হিসেবে সুস্বাদু মিষ্টি তৈরির নির্দেশ দেন রাজ মোদক নামে এক মিষ্টি ব্যবসায়ীকে৷ ঐ ব্যবসায়ী পিয়াল গাছের বীজ সংগ্রহ করে তার বেসন তৈরি করে প্রস্তুত করেন মোতিচুর লাড্ডু। যা সেই সময় থেকেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷ বিষ্ণুপুরের স্থানীয় মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ লড়াইয়ের স্বীকৃতি জুটলো অবশেষে।
রাজ্যের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের অন্যতম সংগঠন মিষ্টি উদ্যোগের তরফে জিআইয়ের আবেদন করা হয় মুর্শিদাবাদের ছানাবড়া, কামারপুকুরের সাদা বোঁদে, বিষ্ণুপুরের মোতিচুরের লাড্ডু এবং বাংলার নলেন গুড়ের সন্দেশের জন্য।
রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রিয় মিষ্টি ছিল কামারপুকুরের সাদা বোঁদে। বন্ধুর বাড়িতে এই বোঁদে খেয়ে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এই সাদা বোঁদের উৎপত্তিস্থল কামারপুকুর। গোটা বিশ্বে কামারপুকুর ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না সাদা বোঁদে।
মালদায় হলুদ রঙের রেশম থেকে তৈরি হয় নিস্তারি সিল্ক। মালদা সিল্ক ইয়ার্ন প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন আবেদন জানিয়েছিল তাদের নিজস্ব রেশম সুতোর জিআই স্বীকৃতির জন্য।
রাঁধুনিপাগল চালের জন্য জিআইয়ের আবেদন করেছিল দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার নরেন্দ্রপুরের স্টেট এগ্রিকালচারাল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এক্সটেনশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। কৃষিপণ্য বিভাগে এই পণ্যের আবেদন করে তারা। এছাড়াও বারুইপুর ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানির তরফে একই বিভাগে আবেদন করা হয়েছিল বারুইপুরের পেয়ারার জিআই-এর জন্য।
বিশেষ সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে এখনও অপেক্ষায় রয়েছে রাবড়ি গ্রামের রাবড়ি, কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল ও উত্তরবঙ্গের গুটি আলুর মতো আরও ১১ টি পণ্য। খুব শীঘ্রই হয়তো জিআই স্বীকৃতি পাবে এই পণ্যগুলো। এগুলো বাদেও বহু পণ্যকে জিআই দেওয়া যেতে পারে সেই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পাবে লিটারেসি প্যারাডাইসে৷
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment