মেঘের স্বতন্ত্রতা, মানুষের স্মৃতি রোমন্থন ও মেঘের প্রতি মুগ্ধতার জালবুননে মুক্তি পেল "মেঘের গান"
পৌষের শীতের সকালে কনকনে ঠান্ডায় কাবু হয়ে মোবাইলে কিংবা ব্লুটুথ স্পিকারে গান শুনতে আমাদের প্রায় সবারই ভালো লাগে। এই সময়কালে একটু অন্যরকম গানগুলো মূলত জমিয়ে দেয়। সম্প্রতি এরকই একটি অন্যরকম গান মুক্তি পেল। গত ১০ ই জানুয়ারি মধ্যরাত অর্থাৎ রাত্রি বারোটার সময় প্রকাশিত হয়েছে নতুন মৌলিক বাংলা গান 'মেঘের গান'।
দূর্দান্ত লেখনী, অসাধারণ ভাষার ব্যবহার, মনোগ্রাহী সুর, হৃদয় আকর্ষক আবহ ও অনবদ্য মেলোডিতে তৈরি হয়েছে 'মেঘের গান'। এই গানের কথা লিখেছেন শুভ সরকার। গানটিতে সুর দিয়েছেন ও গানটি গেয়েছেন অর্ক দাশগুপ্ত। যন্ত্রানুষঙ্গের দায়িত্ব সামলেছেন বিশ্বায়ন দে এবং গানটির ভিডিও তৈরি করেছেন কল্পক দে। অর্ক দাশগুপ্তের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে এই গান।
এ গানে মেঘের প্রতি মানুষের মুগ্ধতা, যে মুগ্ধতাকে মানুষের সময় ও জীবনের একগুচ্ছ স্মৃতির মাপকাঠিতে বেঁধে ফেলা হচ্ছে। ধূসর মেঘগুলো কীভাবে নিয়মমাফিক ভেসে যায়, কীভাবে তারা ঘরগুলো ছুঁয়ে যায় এছাড়াও ভাবুক মানবের মেঘের প্রতি নানান প্রকার অলীক কল্পনার প্রতিফলন ফুটে উঠেছে 'মেঘের গান'-এর ছন্দে ছন্দে। এই গানটি একবার শুনলে বারবার শুনতে ইচ্ছে করবে।
মেঘের গানের প্রসঙ্গে সুরকার ও গায়ক অর্ক দাশগুপ্ত জানান- " 'মেঘের গান' আমার ষষ্ঠ মৌলিক গান। এই গানের মাধ্যমে আমি অন্তত আমার স্মৃতিগুলোকেই সুরের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আমার কাছে "মেঘের গান" শুধু একটি ঋতু বিষয়ক গান নয়। তাই জন্যই বর্ষায় নয়, এই গান প্রকাশিত হতে পেরেছে শীতকালে। আকাশে পুঞ্জীভূত মেঘের মতোই আমাদের মাথায় যেন পুঞ্জীভূত থাকে একাধিক সময়ের একাধিক মানুষের অজস্র স্মৃতি। কিন্তু যেই মানুষ ও মুহূর্তগুলোর স্মৃতি যেভাবে আমাদের উতলা করে তোলে সেভাবে কি তাদেরও এই স্মৃতিগুলো ভাবায়? এর উত্তর অজানা।তাই প্রশ্ন ওঠে "ও মেঘ, তোকে যে দিয়েছে ডাকনাম।তুই কেন যাসনি তাদের শহরে?" যে স্মৃতি আমায় ক্ষত বিক্ষত করে তোলে, সেই স্মৃতি কি তাদেরও সামান্য ভাবায়? এই স্মৃতি যেন খুব স্বাভাবিক ও নিয়মমাফিক ভাবে আমাদের কাছে ধরা দেয়। 'মেঘের গান' - একটি Bengali Indie Genre এর গান। আমি চেষ্টা করেছি এই গানের কথার মূলভাব বজায় রেখে এই গানে সুর করার ও সেভাবেই গায়কীর মাধ্যমে মানুষের সামনে উপস্থাপন করার।"
গানের লেখক শুভ সরকার বলেন, " ‘মেঘ’ বস্তুটিকে মনের বার্তা বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা নতুন কিছু নয়। প্রায় প্রতি যুগেই রোমান্টিক রসিক কবি ও গীতিকাররা এ কাজ করে গেছেন। সেই কবেকার কবি কালিদাসের মেঘদূত থেকে হালের রূপম ইসলামের গানে মেঘের ওজন কমে বৃষ্টি নামার অনুষঙ্গ আদতে মানুষের জীবন বৈচিত্র্যের অভিঘাতের ধারাপাত। এই দীর্ঘ এবং সুদৃঢ় মেঘের যাত্রাপথে আরো কত শত কবি সোনার কলম ছুঁয়েছেন তা আয়ত্ত্বে আনতে গিয়ে গীতিকার হিসেবে আমি বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম কিছুটা। বস্তুত ‘মেঘের গান’ গান হইবার পূর্বে ছিল একটি ১৪ লাইনের সনেট। ফলে বহুদিন পর আবার তাকে বৃদ্ধি করা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল মেঘের স্বরূপ সম্পর্কে। এই মেঘের স্বতন্ত্রতা কী ডিপ্রেশনের নামান্তর নাকি মনের পাড়ায় জন্ম নিচ্ছে সবুজ জীবনের স্বচ্ছলতা? এই দোলাচল থেকেই মূলত এই গান। জলীয় বাষ্পপূর্ণ মেঘের আগমন ও বৃষ্টির পর তার নিঃস্ব হয়ে যাওয়া এটুকুই চিত্র তুলে ধরেছি, বাকিটুকু ওই প্রতীকী মেঘের মতো অবয়বহীন সুরের মতো ভালোবাসা এবং পুরোনো প্রেমের প্রবেশিকা পরীক্ষা ছাড়া কিছু নয়।।"
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment