সাফল্যের সঙ্গে আয়োজিত হলো কিনাঙ্কের বার্ষিক কবিতা ও নাটক মিলনোৎসব
পুজো-পার্বণ মিটতে না মিটতেই বোলপুরবাসী আবারো মেতে উঠলো উৎসবে, বীরভূমের কিনাঙ্ক নাট্য গোষ্ঠীর উদ্যোগে ২৩ ও ২৪ শে নভেম্বর বোলপুরের ভাগবত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত হলো দুই দিনের কবিতা ও নাটক মিলোনোৎসব। "পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি'র" সহায়তায় চতুর্থ বর্ষে পা দেওয়া এই উৎসবের উদ্বোধন করলেন বিশিষ্ট অধ্যাপক তারক সেনগুপ্ত, বিশিষ্ট সমাজসেবী মানস ঘোষ, বিশিষ্ট ডাক্তার ও কবি অনির্বাণ দাশগুপ্ত, সমাজসেবী সুশীল কুমার চৌধুরী এবং বিশিষ্ট চলচিত্র পরিচালক ও লেখক দেব গোপাল মণ্ডল।
বিশেষ এই অনুষ্ঠানের শুভসুচনা হয় স্থানীয় পৌরমাতা পর্ণা ঘোষের পরিচালনায় নৃত্যগীত অনুষ্ঠান "মুক্তমঞ্জরীর" পরিবেশনার মাধ্যমে। স্বাতী মণ্ডল অধিকারীর ও শ্রুতিসঙ্গমের পরিবেশনায় কবিতার দৃশ্যায়নের মহাভারত অনবদ্য। দুইদিনে মোট ছ’টি নাটক পরিবেশিত হয়েছে। বীরভূম, বর্ধমান, চব্বিশ পরগণা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দলগুলির অনন্য সাধারণ প্রযোজনা এই উৎসবকে বিশেষ ভাবে সমৃদ্ধ করেছে, সম্পৃক্ত করেছে উপস্থিত দর্শকদের।
প্রথমদিনে সপ্তপ্রদীপ সংস্কৃতি সোসাইটির পরিবেশনা ও সুব্রত ঘটকের পরিচালনায় "কাঙাল ডোম", বীরভূম আননের বুবুন চক্রবর্তীর " মহাজ্ঞানী", এছাড়াও শুভব্রত রায় চৌধুরী’র নির্দেশনায় "বড়ি ও শ্বশুরমশাই" নিবেদনে কিণাঙ্ক, দর্শকদের এক সৃষ্টির মায়ায় জড়িয়ে রেখেছিল।
দ্বিতীয়দিনের শুরু হয় সক্কাল সক্কাল মানস ঘোষের যোগাসন বিষয়ক সেমিনার দিয়ে। এরপর আমন্ত্রিত কবিদের কবিতা পাঠ অনুষ্ঠানে একটা আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। দ্বিতীয় দিনের সান্ধ্য অনুষ্ঠানে বলাকা চন্দ্র ও শুভব্রত রায় চৌধুরীর শ্রুতিনাটক দর্শকদের মাতিয়ে তোলে। অলপদ্মা বর্ধমান ও কিনাঙ্ক’র যৌথ নিবেদিত "দেবতার গ্রাস", দেবাশিষ সরকারের পরিচালনায় ইউনিটি মালঞ্চের নিবেদন "নিশিকুটুম" ও গোরাচাঁদ সেনগুপ্তের পরিচালনায় হোমানল নাট্য সংস্থার "সরযু নদীর তীরে" পরপর তিন তিনটি অনবদ্য নিবেদন দিয়ে সমাপ্তি ঘটে এই অনুষ্ঠানের।
পায়ে পায়ে তিরিশে পা দেওয়া কিনাঙ্কের এই চতুর্থ বর্ষের "কবিতা ও নাটক মিলোনোৎসব" অনুষ্ঠানে দর্শকের যোগদান আগামীতে কিনাঙ্কের পাথেয়। আর সেই প্রসঙ্গে কিনাঙ্ক'র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শুভব্রত রায় চৌধুরী বলেছেন "আবৃত্তি ও শ্রুতিনাটক উৎসব মাঝে মাঝে হলেও সংস্থার ২৫ বছর পথ চলার পর ঠিক হয় আমরা এবার থেকে বহু প্রতীক্ষিত মঞ্চ নাট্যোৎসব করব। ২৭ তম বছর থেকেই এই নিয়ে চতুর্থ বার নিরবিচ্ছিন্ন এই আয়োজন। প্রাথমিক ভাবে বেসরকারী অনুদানের উপর নির্ভর করে পথ চলার শুরু। পরবর্তীতে অবশ্য সরকারী অনুদান মিলেছে দু-এক বার।এছাড়াও সহৃদয় সংস্কৃতি মনস্ক কেউ কেউ এসে সাহস জুগিয়েছেন নিরন্তর। প্রচারের আড়ালে থেকে তাঁরা সর্বতোভাবে সাহায্য করেছেন। তাঁদের সেই মুহুর্ত থেকে আমরা পরিবারের একজন করে ভাবতে সুযোগ পেয়েছি। কৃতজ্ঞতা সর্বদাই থাকবে। দর্শক সাধারণ এ শহরে হাতেগোনা। যেখানেই উৎসব সামিয়ানা টাঙানো হোক, তাঁরা আসবেনই। এই ভরসা। সংখ্যাটা বাড়ানোর জন্য আমরা সদা সচেষ্ট। তবু যেন কিছুটা অনীহা বর্তমানে বেশীরভাগ মানুষের মধ্যে। পরিচিত থিয়েটার কর্মীদের বড় অংশই বিভিন্ন অজুহাতে অনুপস্থিত থাকেন। কিন্তু আমরা সামনে উপস্থিত মানুষের উপর আস্থা রাখতে শিখে গেছি। তাই ওসব আর পরোয়া করি না।
আগামী সর্বদাই অনিশ্চিত। কিণাঙ্ক শুধু চলতে চায়, না থেমে বয়স মেনে, সামর্থ্য মেনে শুধু চলতে পারলেই খুশি। আলাদা কোনও প্রত্যাশা নেই, শুধু পরিচিতরা জানবে এরা থিয়েটার করে, ব্যস ওতেই আমাদের পুরস্কার, পুষিয়ে যায় সবটা।"
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment