শতবর্ষে পদার্পণ নৈহাটির ঐতিহ্যবাহী বড়মা'র পুজোর
ঐতিহ্যের শতবর্ষ পার৷ নৈহাটির বড়মা'র পুজো এবার শতবর্ষে পদার্পণ করলো। বাংলার প্রাণের পুজো হলো কালীপুজো। বাংলার অন্যতম প্রাচীন কালীপুজোর মধ্যে একটি হলো নৈহাটির বড়মা। এই কালী প্রতিমার উচ্চতা এতোটাই বেশি থাকে যে তাকালে চোখ ফেরানো যাবে না। এই কালীমূর্তির উচ্চতা প্রায় ২২ ফুটের কাছাকাছি।
পুজোর দিন ১০০ কেজির গহনা পরানো হয় বড়মা কে। এই পুজোর কেন্দ্রস্থল কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়। নৈহাটির জাগ্রত দেবী হলেন বড়মা, যার পুজো শুরু না হলে নৈহাটির আর কোনো পুজো শুরু হয়না৷ একদিন বা দুদিন নয়, টানা পাঁচদিন ধরে চলে বড়মার আরাধনা। নিরঞ্জনের দিন দেবীমূর্তিকে ফুলের সাজে সাজিয়ে গোটা এলাকায় বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।
স্থানীয়দের মতে, বড় মায়ের বিসর্জন না হওয়া পর্যন্ত নৈহাটির অন্য কোনও কালীমূর্তিকে বিসর্জন করা যায় না। বড়মার জন্য আয়োজন করা হয় আলোর বিশেষ কার্নিভালও।
ইতিহাসের দলিল থেকে জানা যায়, আজ থেকে ১০০ বছর আগে নৈহাটির বাসিন্দা জনৈক ভবেশ চক্রবর্তী ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু নবদ্বীপে রাসযাত্রা দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে মস্ত বড়ো বড়ো দেবদেবীর মূর্তি দেখে তাঁরা মনস্থির করেন পরের বছর নৈহাটিতে তাঁরাও এমন বড়ো একটি মাতৃপ্রতিমা কালীর পুজো করবেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। শুরু হলো চৌদ্দ হাতবিশিষ্ট বাইশ ফুট লম্বা কালীমূর্তির পুজো। প্রসঙ্গত বৈষ্ণব মতে দক্ষিণা কালীরূপে পূজিতা হন বড়মা। তাই এই পুজোতে কোনো বলিদান প্রথা নেই।
লোকমুখে প্রথমে এই পুজো ভবেশ কালী হিসেবেই পরিচিত ছিল৷ পরবর্তীকালে মূর্তিটির উচ্চতার কারণে বড়মা নামেই জনমানসে পরিচিতি লাভ করে। প্রাচীন ঐতিহ্যকে বজায় রেখে আজও পুজোর ভোগ আসে চক্রবর্তী বাড়ি থেকেই। পুজোর রাতে বড়মা-র প্রসাদে থাকে পোলাও, খিঁচুড়ি, পাঁচ রকমের ভাজা, তরকারি, লুচি, চাটনি, পায়েস৷ বিসর্জনের আগের দিন রাতে দেবীকে লাড্ডু ভোগ দেওয়ার প্রথাও অটুট রয়েছে।
"ধর্ম যার যার, বড়মা সবার" এই বাণীকে পাথেয় করে দেখতে দেখতে শতবর্ষে পদার্পণ করলো নৈহাটির বড়মার পুজো। প্রত্যেক বছর দীপান্বিতা অমাবস্যার তিথিতে পূজিত হন বড়মা৷
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment