বাঙালি ভুলতে বসেছে ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তকে
কোন দেশেতে তরুলতা / সকল দেশের চাইতে শ্যামল ?/ কোন দেশেতে চলতে গেলেই/ দলতে হয় রে দুর্বা কোমল ?/
এ কবিতা পড়ে যে বড় হয়নি এমন বাঙালির শৈশব মনে হয় অসুন্দর ছিল। বাংলার এমন রূপ ফুটে উঠেছে ছন্দের জাদুকরের লেখায়। বাঙালির ও বাংলার প্রকৃতির সহজ সরল রূপ বার বার ধরা দেয় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখায়।
ঝর্ণা! ঝর্ণা! সুন্দরী ঝর্ণা/ তরলিত চন্দ্রিকা! চন্দন বর্ণা! -- ছন্দের এমন মিল আমাদের মনকে নাড়া দেয় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের প্রতিটি কবিতায়।
আমরা প্রায় সকলেই বলে থাকি- কুকুরের কাজ কুকুর করেছে / কামড় দিয়েছে পায়,/ তা বলে কুকুরে কামড়ানো কিরে/ মানুষের শোভা পায়? কিন্তু এই উক্তির জন্মদাতাকেই আমরা যেন ভুলে গেছি। শিশুবেলায় ইলশে গুঁড়ি! ইলশে গুঁড়ি / ইলিশ মাছের ডিম এই সব কবিতা গুলো শৈশবকালের আনন্দ অনেক বাড়িয়ে দিত।
শৈশবে বাংলার মাটির প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে দিতে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের জুড়ি মেলা ভার। যেমন- মধুর চেয়ে বেশি মধুর/ সে এই আমার দেশের মাটি/ আমার দেশের পথের ধূলা/ খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি।
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতায় বাংলার ফুল নিয়ে উঠে আসে নানান বর্ণনা। চম্পা, জবা, করবী এসব ফুল নিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা প্রতিটি বাঙালির মন জয় করে।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মাত্র চল্লিশ বছরের জীবনে সৃষ্টি করা কবিতাগুলো বাঙালির জীবনের অঙ্গ বলা যেতে পারে। কবিরত্ন, অশিতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, দত্ত নবকুমার, কালামগীরের মতো ছদ্মনামে লিখেছেন একের পর এক কবিতার বই। বেণু ও বিনা, ফুলের ফসল, কুহু ও কেকা, তুলির লিখন, অভ্র আবির, তীর্থ রেণু, তীর্থ সলিল, সবিতার মতো কবিতার বই গুলো সমান জনপ্রিয়। এছাড়াও ভোরাই এর মতো ভোরের গান নিয়ে লেখা বই ও শিশুদের কবিতা সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কাব্য প্রতিভাকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ওনার লেখা জন্মদুখী উপন্যাস, রাঙ্গামাল্লি নাটক ও চীনার ধূপের মতো প্রবন্ধ-ও বাংলা সাহিত্যকে মহিমান্বিত করেছে।
বাংলা সাহিত্যের জন্য একটি দুঃখের বিষয় হলো অনেক কম বয়সে বাংলার বহু কবির মৃত্যু। সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুকুমার রায়, জীবনানন্দ দাশের মতো মাত্র ৪০ বছরেই মৃত্যুবরণ করেন কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। আজ ওনার মৃত্যু দিনে প্রতিটি বাঙালির উচিত ওনাকে স্মরণ করা কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বাঙালি যেন ওনাকে ভুলতে বসেছে। বাংলার মাটিতে রচিত হয়েছে এক বিরূপ রাজনৈতিক পরিবেশ যেখানে আজ সেই আমাদের বাংলাদেশ/ আমাদেরই বাংলা রে কবিতাটি আবৃত্তি না করতে পারার মতো পরিবেশ রচিত হয়েছে। আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ডের মাটিতে বাঙালি যেন আজ কোনঠাসা। বাংলা ভাষা যেন ব্রাত্য। বাঙালির এই বিরূপ পট পরিবর্তন বাংলা সাহিত্যের জন্য চিন্তার বিষয়।
প্রতিবেদন- অমিত দে
Post a Comment