Header Ads

রমা পাল কেবল গৃহবধূ নন, তাঁর কোম্পানির তৈরি পোশাক-ই বেঙ্গল পুলিশের উর্দি


শূন্য থেকে শুরু করে ছাপোষা একজন গৃহবধূ থেকে শ্রীমতী রমা পাল আজকে হয়ে উঠেছেন বাংলার পুলিশের পোশাকের সুদক্ষ কারিগর। দীর্ঘ চোরাপথ পেরিয়ে তিনি নিজের রাজত্ব কায়েম করেছেন। পুলিশের উপরতলা থেকে নীচুতলা সকলেই তাঁকে সম্মান করেন। সদ্য যারা পুলিশে যুক্ত হন তারা তাদের পোশাক বানানোর জন্য ভিড় জমান রমা পালের বাড়িতে।


অল্প বয়সেই শ্রীমতী রমা পাল স্বামীহারা হন। দুই পুত্রের জন্ম দিয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে তাঁর স্বামী মারা যান। এরপর এক অসহায় জীবনে পা দেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুরবাড়িতে পাশবিক অত্যাচার চলতে থাকে তাঁর ওপর। তিনি নিজের দুই ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করার স্বপ্ন বুকে নিয়ে নিজের শ্বশুরবাড়ি মাঝেরগ্রাম ছেড়ে চলে আসেন রানাঘাটে। সংসার চালানোর জন্য অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ বেছে নেন তিনি। কিন্তু পরিচারিকার কাজ করে ছেলেদের পড়াশোনার খরচ জোগানো বেশ দুর্বিষহ ব্যাপার হয়ে ওঠে তাঁর কাছে। 

হঠাৎ একদিন কোনো এক সূত্র থেকে খবর পান যে পুলিশের পোশাক বানিয়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য লোক নেওয়া হবে। এই সুযোগটিকে তিনি দারুণভাবে কাজে লাগান। নিজের হাতে পুলিশের পোশাক বানিয়ে নিয়মিত পৌঁছে দিতে থাকেন তিনি। তাঁর তৈরি পুলিশের পোশাক ক্রমেই জনপ্রিয় হতে থাকে। পুলিশের সঙ্গে দিনরাত ওঠাবসা দেখে পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে নানান ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও শুনতে হয় তাঁকে। যদিও সেইসব ব্যঙ্গ-বিদ্রুপকে তোয়াক্কা করতেন না তিনি। 

স্বল্প সময়ে তাঁর তৈরি পুলিশের পোশাক নদীয়ার গন্ডি ছাড়িয়ে সারা বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বর্তমানে পুলিশকর্মীদের পছন্দের সুদক্ষ কারিগর রানাঘাটের রমা পাল। বলা ভালো, পুলিশের পোশাক তৈরির সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। পুলিশের পোশাক তৈরি করে আজ তিনি দুটি কারখানা গড়ে তুলেছেন। তৈরি করেছেন নিজের বাড়ি। দুই ছেলেকে সুশিক্ষিতও করে তুলেছেন তিনি। তাঁর বড় ছেলে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিভিক ভলেন্টিয়ার্স এবং তাঁর ছোটো ছেলে তাঁকে পোশাক বানানোর কাজে সাহায্য করেন। 

সামান্য গৃহবধূ থেকেও যে অনেক কিছু করা যায় তার বড়ো উদাহরণ হলো শ্রীমতী রমা দেবী৷ তিনি বলেন, "পুলিশকে সবাই খারাপ ভাবে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে পুলিশের অফিসার থেকে পুলিশকর্মী সকলে আমাকে সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানান। নিজে ভালো হলে বা কেউ কিছু চেষ্টা করলে সব সম্ভব হয়। খারাপ ভাবার কিছু নেই। সব পুলিশকর্মী সমান হয় না।" 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments