তিনটি ভিন্ন সময়ের গল্পের বুনটে আসন্ন শীতে মুক্তি পাচ্ছে 'সেদিন কুয়াশা ছিল'
আমাদের জীবনে প্রতিদিন নিত্যনতুন সম্পর্ক তৈরি হয়। রোজকার জীবনে প্রচুর সম্পর্কের মধ্যেই আমরা বাঁচি। সেই সম্পর্কগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যবোধ আমাদেরকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখে। কখনও কখনও সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারার জন্য জন্ম নেয় অপরাধবোধ। এরকমই তিনটি গল্পের সমন্বয়ে আসছে নতুন বাংলা ছবি 'সেদিন কুয়াশা ছিল'।
সম্পূর্ণ নতুন ভাবনার এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন পরিচালক অর্ণব কে মিদ্যা। এ ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক নিজে। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন অভিনেতা জিতু কমল, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, পরাণ বন্দোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তী দেবশঙ্কর হালদার, খরাজ মুখার্জী, জয় সেনগুপ্ত, সৌরসেনী মৈত্র, অবন্তিকা বিশ্বাস, সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা, পৃথা বন্দোপাধ্যায় ও আরো অনেকে।
তিনটি গল্পে তিনটি ভিন্ন সময়কে তুলে ধরা হবে। প্রথম গল্পে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ের কথা বলা হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন যখন রণক্ষেত্রে সামিল হতো তখন তাদের পরিবার-পরিজনেরা অপেক্ষা করতো ঘরের মানুষটি কখন ফিরবে। তাদের রাতের পর রাত প্রতীক্ষায় কাটিয়ে দেওয়ার কথা আজও ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়নি৷ ভারতের স্বাধীনতার যুদ্ধে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর কথাও ইতিহাস বইতে সেভাবে পড়ানো হয়না। এই ছবির প্রথম গল্প এক মহিলা ও তার স্বামী এবং এক অতিথি বিপ্লবী তিনজনের টানাপোড়েনের গল্প। সেইসময় যে মানুষগুলো স্বাধীনতা আসবে কী আসবে না তা না জেনেও নিঃস্বার্থ ভাবে দেশের জন্য লড়াই করেছিল তাদের দুঃখ-দুর্দশা, চাওয়া না পাওয়ার যন্ত্রণা এবং জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে লড়াই করার মানসিকতার এই গল্প সেইসব ঘটনার এক জ্বলন্ত দলিল।এই গল্পে এক বিপ্লবীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্ণ মুখোপাধ্যায়। স্বামীর প্রতীক্ষায় রাতের পর রাত জাগা সেই মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌরসেনী মৈত্র। সৌরসেনীর স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সবুজ বর্ধন। এছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন উপাবেলা মুখোপাধ্যায় পাল, সুপ্রিয় ও সায়ন্তন ঘোষাল প্রমুখ৷
দ্বিতীয় গল্পটি এক বাবা-মা ও তাদের সন্তানের গল্প। কাজের সূত্রে সন্তান শহরে থাকে আর বাবা-মা থাকে প্রত্যন্ত গ্রামে। কাজের দীর্ঘ ব্যস্ততার জন্য বাবা-মা ও সন্তানদের খুব একটা দেখা-সাক্ষাৎ হয়না। এমনকি ছেলের বৌ আবার অজ পাড়া-গাঁয়ে থাকে এমন মানুষদের সাথে যোগাযোগ রাখতে চায় না৷ হঠাৎ করেই ছেলের জন্মদিনে বাবা-মা শহরের বাড়িতে হাজির হয়। তারপরের ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রবাহ ছেলে-বৌয়ের মনে বিরক্তির সৃষ্টি করলেও পরে তা শিহরণ জাগিয়ে তোলে। বাবা-মায়ের প্রতি কর্তব্য করতে না পারার কারণে অকস্মাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা ছেলেকে বাকরুদ্ধ করে তোলে। এই গল্পে অভিনয় করেছেন জিতু কমল, সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা, পৃথা বন্দোপাধ্যায়, পরাণ বন্দোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তী। একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন রসগোল্লা খ্যাত অভিনেত্রী অবন্তিকা বিশ্বাস। পৃথা বন্দোপাধ্যায় এই প্রথমবার ছবিতে অভিনয় করছেন, যিনি সম্পর্কে পরাণ বন্দোপাধ্যায়ের নাতনি৷ এই ছবির মাধ্যমে প্রথমবার একসাথে জুটি বেঁধেছেন পরাণ বন্দোপাধ্যায় ও লিলি চক্রবর্তী।
তৃতীয় গল্পটি লেখিকা সুচিস্মিতা দেবের ছোটোগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে৷ তৃতীয় গল্পটি তিন বন্ধুর গল্প। ৩০ বছর আগে ঘটে যাওয়া কোনো এক ঘটনার ফলে তিন বন্ধুর বিচ্ছেদ হয়, যার ফলে রাগে-অভিমানে তারা নিজেদের পাহাড়ে লুকিয়ে রেখেছিল। হঠাৎ একদিন তাদের মধ্যে এক বন্ধুর পৌরহিত্যে তারা ঠিক করে যে আবার তারা একসাথে দেখা করবে কোনো রবিবারের সকালে শহর থেকে বহু দূরে। দেখা করার জন্য কিছু প্রাথমিক শর্ত ছিল তাদের। তারা কেউ নিজেদের গাড়ি সঙ্গে আনবে না আর গন্তব্যে এসে কেউ মোবাইল খোলা রাখবে না যাতে তাদের বন্ধুত্বের মাঝে কেউ না এসে সময়টা নষ্ট করে দেয়৷ এরপর বাকিটা সিনেমার পর্দাতেই দেখা যাবে। এই গল্পে অভিনয় করেছেন দেবশঙ্কর হালদার, জয় সেনগুপ্ত ও খরাজ মুখার্জীর মতো অভিনেতারা৷
প্রথম গল্পে সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন শুভজিৎ নস্কর এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় গল্পে সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন মনোজ কর্মকার। 'সেদিন কুয়াশা ছিল' পরিচালক অর্ণব মিদ্যার দ্বিতীয় ছবি। কলকাতা, সুন্দরগ্রাম ও হুগলির একটি গ্রামে হয়েছে ছবির শুটিং। এই ছবিটি সম্পাদনা করেছেন অনির্বাণ মাইতি। এই ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন সঙ্গীতশিল্পী রণজয় ভট্টাচার্য, যার গান এই ছবিতে অনন্য মাত্রা দেবে। বর্তমানে চলছে এই ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ৷ আসন্ন শীতেই মুক্তি পাবে এই ছবি৷ স্যান্ড আর্ক মিডিয়ার ব্যানারে তৈরি হয়েছে এই ছবি।
'সেদিন কুয়াশা ছিল'র প্রসঙ্গে পরিচালক অর্ণব মিদ্যা লিটারেসি প্যারাডাইসকে জানান, "আমরা প্রতিদিন সম্পর্কে বাঁচি, সম্পর্কের সাথে জড়িয়ে থাকা দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ আমাদেরকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে। কখনও কখনও আমরা সেই কর্তব্য করতে না পারার যে অপরাধবোধ বা তার থেকে ঘটে যাওয়া অপরাধের গ্লানি আমাদের জীবনকে নাড়িয়ে দেয়। আমরা প্রতিদিন যা কাজ করি বা প্রতিদিনের কাজের মাঝে ব্যর্থতার যন্ত্রণা, আমাদের অবচেতন মনে গভীর ছাপ ফেলে যায়। সেদিন কুয়াশা ছিল সেরকমই কিছু সম্পর্কের ঘটনা, চাওয়া-পাওয়ার মাঝে ঘুরতে থাকা ঘটনা যার উপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই অথবা নিয়ন্ত্রণ থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা পরিস্থিতির শিকার, সেইরকম ঘটনাগুলো যা সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে; সেইরকম সম্পর্কের গল্প এই ছবিটি। আমার জন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে, যেখানে সম্পর্কগুলোকে প্রচন্ড রকম ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়, ফলে আমার চিন্তাধারা, কাজকর্ম সবকিছুর মধ্যে সম্পর্ক গুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। 'অন্দরকাহিনী'র পরের ছবিতেও আবার সেই সম্পর্কের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে গল্প। যদিও 'সেদিন কুয়াশা ছিল'র গল্প একটা অন্য আঙ্গিকে মোড়া।"
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment