মাত্র ৩৪ বছরের জীবনেই হরিনাথ দে শিখে ফেলেছিলেন ৩৪ টা ভাষা
বুদ্ধি দৃপ্ততায় বাঙালি অসাধ্য সাধন করে এসেছে বারংবার। বিজ্ঞান সাধনা থেকে সাহিত্য বা বীরত্ব সব জায়গায় বাঙালি তার ছাপ রেখে গেছে। সুকান্ত ভট্টাচার্য মাত্র ২১ বছরে কবিতার পাহাড় বানিয়ে দিয়ে গেছেন। ডিরোজিও মাত্র ১৭ বছর বয়সেই মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ১৮-১৯ বছরের বাঙালি সন্তানরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন।
হরিনাথ দে মাত্র ৩০ বছর বয়সেই আয়ত্ব করে ফেলেছিলেন ৩৪ টি ভাষা। এত কম সময়ে এত ভাষা শিখতে আজ পর্যন্ত এ বিশ্বে সম্ভবত কেউ পারেননি।
১৮৯৩ সালে তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্রেসিডেন্সির ছাত্র হিসেবেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ও ল্যাটিন ভাষায় ষান্মাসিক স্নাতক লাভ করেন। ঐ বছরই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ল্যাটিন ভাষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন ও সরকারি বৃত্তি পেয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। কেমব্রিজে পড়ার সময় তিনি গ্রীক ভাষায় এম.এ. তে প্রথম স্থান অধিকার করেন প্রাইভেট পরিক্ষার্থী হিসেবে। এর পরেই তিনি প্যারিসের সর্বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি শেখেন। তিনি বিভিন্ন ভাষা শেখার জন্য মিশর, জার্মানির মতো দেশে পাড়ি দিয়ে শিখেছেন হিব্রু, আরবি, ফারসী, পালি, ইটালিয়ান, রুশ, সংস্কৃত, টাইবেটিয়ান, চাইনিজ, পার্সিয়ান, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, জার্মান, ফরাসি ইত্যাদি।
ওনার শেখা ৩৪ টি ভাষার ১৪ টি ভাষাতেই ছিল এম.এ.। তিনি ১৯০৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি নতুন বিভাগ ভাষাতত্ত্ব বিভাগের প্রথম অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। প্রেসিডেন্সি কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি অধ্যাপনা করেছেন। তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরীর লাইব্রেরিয়ান হিসেবে নিযুক্ত হন।
তিনি ইবন বতুতার ভ্রমণ বৃত্তান্ত রেহেলা ও জালালুদ্দিন আবু জাফর মুহম্মদের আল-ফকরির আরবি থেকে ইংরেজি অনুবাদ করেন। ফরাসী লেখক ঝাঁলর স্মৃতিকথা সম্পাদনা, সুবন্ধুর বাসবদত্তার ইংরেজি অনুবাদ করেন। ফারসি ভাষায় রচিত ঢাকা শহরের ইতিহাস 'তারিখ ই নুসরাত' এর ইংরেজি অনুবাদ করেন। বাদশাহ শাহ আলমের জীবনী 'শাহ আলম নামা', বঙ্কিমচন্দ্রের 'কৃষ্ণচন্দ্রের উইল', অমৃতলাল বসুর 'বাবু' এর ইংরেজি অনুবাদ করেন।
তার কাজের আর একটি অন্যতম দিক হল তিনি আরবি, ফারসি, পালি, বাংলা, রুশ এসবের ইংরেজি অনুবাদ।
রাশিয়ান প্রাচ্যতত্ত্ববিদ কোরবাভস্কি কলকাতায় এসে হরিনাথ দে'কে সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার জন্য আমন্ত্রণ করেন। জাপানের পন্ডিত ওটানি কোজুই, জার্মানের রিচার্ড ফন পিশেলের মতো পন্ডিতরা হরিনাথ দের প্রশংসা করেছেন। পোপ দশম পিউসের সামনে ল্যাটিন ও পরমুহূর্তেই ইটালিয়ান বলে চমকে দেন।
বাঙালির গর্ব হরিনাথ দে মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই আমাদের ছেড়ে চলে যান। ছন্দের যাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ওনার মৃত্যুতে দুঃখের সাথে লেখেন-
'যাচ্ছে পুড়ে দেশের গর্ব/
শ্মশান শুধুই হচ্ছে আলা/
যাচ্ছে পুড়ে নতুন করে সেকেন্দ্রিযার গ্রন্থশালা।'
প্রতিবেদন- অমিত দে
Post a Comment