গ্রাম বাংলা থেকে লুপ্তপ্রায় হতে চলেছে হাতে তৈরি উলের আসন
আসন ও বিভিন্ন রকমের কার্পেটের কাজ এক সময় বাংলার প্রতিটি ঘরে তৈরির চল ছিল। প্রায় প্রতিটি ঘরের মা বোনেরা এক প্রকার শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল এই কাজকে। আজ থেকে ২০ বছর আগেও বিভিন্ন মাটির বাড়িতে কার্পেটের বিভিন্ন ধরণের লেখা ফুটিয়ে তোলা হতো এবং তা বাড়িতে টাঙানো থাকতো। 'পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম পিতাই পরমতপ' বা 'এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে, আমার এ ঘরে থাকো আলো করে' এ ধরণের বিভিন্ন লেখা খোদাই করা হতো।
প্রতিটি সকাল, বিকালে বাড়ির মেয়েদের অবসর কাটানোর একটি অন্যতম অঙ্গ ছিল উলের আসন, কার্পেট, হাতপাখা তৈরি, উলের টুপি, নক্সী কাঁথা, উলের শোয়েটার ইত্যাদি তৈরি করা। পুরানো দেশলাই বাক্স, শালিমার নারকেল তেলের বোতল দিয়ে আনারস তৈরি, চুমকি ও কাগজ ব্যবহার করে বিভিন্ন ঘর সাজানোর জিনিস তৈরিও ছিল বেশ জনপ্রিয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বর্তমানে এসব এখন যেন অতীত। তবে কি বিগত কুড়ি বছর টিভি, ইন্টারনেটের মতো জিনিসে অবসর কাটানোর ফলেই এসব কমে যাচ্ছে। বর্তমানে চেয়ার টেবিল আসার ফলে আসনের ব্যবহার কমলেও টেবিল ক্লথ বা চেয়ার ঢাকা দেবার আসন তো তৈরি করা যায় কিন্তু তার পরেও কেন এসব কমে যাচ্ছে তা চিন্তার বিষয়।
বাঙালিয়ানা নির্ভর এই সব শিল্পকর্মকে ধরে রাখতে আমরাই যেন ভুলে গেলাম। ২০ বছর আগেও দেখেছি এসব তৈরিতে মা বোনেরা একটা দারুণ তৃপ্তির স্বাদ অনুভব করতো। বাঙালির অবসর কাটানোর ধরণ অনেক বদলে যাচ্ছে। বই পড়ে অবসর কাটানোর দিন অনেক আগেই চলে গেছে। হারিয়ে গেছে বাঙালির ঘরের লাইব্রেরী কালচার। তার সাথে উলের দ্রব্য, নক্সী কাঁথা তৈরিও ভুলতে বসেছে বাঙালি। বাঙালির নিজের উত্তরণ ঘটানোর কাজ আবার শুরু করা উচিৎ। আমাদের পুরাতন ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়া আমাদের স্বজাতির জন্য বিপজ্জনক বলেই মনে হয়।
প্রতিবেদন- অমিত দে
Post a Comment