হেরিটেজ তকমা পেল খেজুরিতে অবস্থিত ভারতের প্রথম প্রাচীনতম ডাকঘর
ব্রিটিশ আমলের কথা। সালটা ১৮৫০। কাঁথি মহকুমার খেজুরিতে তখন ছিল বিশাল এক বন্দর। ১৬৭২ সালের পরবর্তী সময় থেকে খেজুরি পর্তুগিজদের ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি বড়ো ঘাঁটি হিসেবে গড়ে উঠেছিল। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ধীরে ধীরে ফুলে ফেঁপে উঠলেও অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো উপায় ছিল না। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ আমলে খেজুরির বুকে একটি ডাকঘর নির্মাণ করা হয়।
খেজুরির সেই প্রাচীন ডাকঘরই ভারতের প্রথম ডাকঘর৷ ১৭৭২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলার গভর্নর জেনারেল হয়ে আসেন ওয়ারেন হেস্টিংস। তিনি প্রথম ব্রিটেনের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্যোগী হন৷ ১৭৭২ সালে খেজুরির বন্দর অফিসের দোতলায় তিনি প্রথম ডাকঘর ব্যবস্থা প্রচলন করেন।
১৯০৭ সালের ইম্পিরিয়াল গেজেট অফ ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, খেজুরিতে কেবল ভারতের প্রথম প্রাচীনতম ডাকঘরই নয়, খেজুরিতে আরও একটি ঐতিহাসিক দলিল রয়েছে। খেজুরিতে ডাকঘরের মাথায় সর্বপ্রথম ভারতীয় টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার প্রচলন হয়।
১৮৬৪ সালে ডাকঘরটি বন্ধ হয়ে যায়৷ প্রবল ঝড় ও বন্যায় খেজুরি বন্দরটি ধ্বংস হয়ে যায়। তারপর থেকেই ডাকঘরের জন্য ব্যবহৃত ঘরটি আগাছার জঙ্গলে ভরে যায়। বর্তমানে খেজুরি গ্রামের বাজকুল রেঞ্জের খেজুরি অফিসের আওতাধীন এলাকায় সুবৃহৎ ডাকঘরের ত্রিতল ভবনটির সিঁড়িঘরটুকুই অবশিষ্ট রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে খেজুরির মানুষের দাবি ছিল, খেজুরির ডাকঘরকে হেরিটেজ মর্যাদা দেওয়া হোক। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে খেজুরির ডাকঘরকে হেরিটেজ মর্যাদা দিল রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। এই খবরে খুশীর জোয়ার এসেছে খেজুরির মানুষদের মনে।
হেরিটেজ সুরক্ষা সমিতির আবেদনের ভিত্তিতে চলতি বছরের ২১ শে জুন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল খেজুরী ডাকঘর পরিদর্শনে আসেন৷ সেখানে হেরিটেজ সুরক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি জানিয়ে ডাকঘরটি প্রাচীনত্বের প্রমাণ হিসেবে কিছু প্রয়োজনীয় নথি তুলে দেওয়া হয়। সেই নথি পরীক্ষার পর খেজুরির ডাকঘর পেল হেরিটেজ স্বীকৃতি।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment