৩০ ফুটের গ্রামাফোন, বাঙালির হারানো নস্টালজিয়া ফিরছে আহিরীটোলা সার্বজনীন দুর্গোৎসবে
'গ্রামাফোন' এই শব্দটিই হয়তো ভুলে যাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। এক সময় গ্রামাফোন ছিল বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য। বিশাল মাইকের নীচে তাওয়ার মতো ক্যাসেট লাগিয়ে গান শোনার চল ছিল বহু দশক আগে। আধুনিক সময়ের তালে তাল মিলিয়ে গান শোনার উপকরণে নানান পরিবর্তন এসেছে। গ্রামাফোনের ক্যাসেট আজ ছোটো হতে হতে মেমোরি কার্ডে রূপান্তরিত হয়ে আশ্রয় নিচ্ছে স্মার্টফোন কিংবা আইট্যাবে। গ্রামাফোনের যুগ আজকে অতীত। বর্তমান দিনে যে সকল বাড়িতে গ্রামাফোন আছে সেগুলো ধূলোপড়া অবস্থায় অতীতের ঐতিহ্য বহন করছে।
আহিরীটোলা সার্বজনীন দুর্গোৎসবে এবার ফেরানো হচ্ছে গ্রামাফোনের সময়কে। একটা ৩০ ফুটের গ্রামাফোন দাঁড়িয়ে আছে তবে সেটা ভগ্ন অবস্থায় দণ্ডায়মান। তারপর একটা বৃহদাকার রেডিও। তার সাথে প্রচুর ক্যাসেট, ভিসিআর ও টেপ রেকর্ডার। পাশেই একটি কাল্পনিক থিয়েটারের মঞ্চ। আর সেখানেই নানান সব চরিত্রের ভিড়ে বিরাজমান দশভুজা দেবী দুর্গা। ঠিক এমন একটা আবহই তৈরি করা হয়েছে আহিরীটোলা সার্বজনীন দুর্গোৎসবে।
উত্তর কলকাতার পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম আহিরীটোলা সার্বজনীন দুর্গোৎসব। এই পুজোটি অবস্থান করছে আহিরীটোলা বি.কে পাল এভিনিউতে। ইতিমধ্যেই ৮২ টি বসন্ত অতিক্রম করে এই পুজো চলতি বছরে ৮৩ তম বর্ষে পদার্পণ করছে। বিগত কয়েক বছর ধরে থিমের আসর জমিয়ে আসছে আহিরীটোলা সার্বজনীন দুর্গোৎসব। এ বছর এখানকার পুজোর মেজাজটাই সম্পূর্ণ আলাদা। বাঙালির পুরানো দিনের নস্টালজিয়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে চেনাবে এই পুজো কমিটি।
এক দশক আগে পর্যন্ত পুজোর গান নিয়ে বাঙালির বিশেষ উন্মাদনা ছিল। নতুন নতুন শিল্পীর পুজো স্পেশাল গানের অ্যালবামের সিডি কেনার ভিড় ছিল দেখার মতো। মণ্ডপে মণ্ডপেও বাজতো শুধুই পুজোর গান৷ ডিজিটাল ফর্মেটের যুগে বাঙালি পুজোর গান থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মণ্ডপেও এখন সেভাবে খুব একটা পুজোর গান চলে না। আগে রেডিওতে আকাশবাণীতে যেভাবে লোকে নিয়ম করে বছরে একদিন মহালয়া শুনতো এখন সেভাবে কেউ মহালয়া শোনে না। এখন সারা বছরই মোবাইলে মহালয়া শোনা যায়। এটাই মণ্ডপের মূল ভাবনা, তাই থিমের নামকরণ করা হয়েছে "আকাশবাণী"।
পুজোর দিনগুলোতে মণ্ডপে শোনা যাবে শুধুই স্বর্ণযুগের শিল্পীদের গাওয়া গান। মণ্ডপে থাকছে দুশোখানা রেডিও এবং শখানেক ক্যাসেট৷ শিল্পী দেবজ্যোতি জানার ভাবনায় তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। প্রতিমা নির্মাণ করেছেন শিল্পী পিন্টু শিকদার৷ মণ্ডপের সামনে বৃহদাকার চোঙাওয়ালা গ্রামাফোন প্রতিটি দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment