সংবাদপত্রের জনক গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের স্মৃতিরক্ষায় গড়ে উঠবে সংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগার
বাঙালি ভুলতে বসেছে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের নাম। যিনি ছিলেন প্রথম বাঙালি প্রকাশক, বই ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক। গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পূর্ব বর্ধমান জেলার গঙ্গা তীরবর্তী অগ্রদ্বীপ-গাজিপুরের সন্নিকটে বহড়া গ্রামে এক মধ্যবিত্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নিজের প্রচেষ্টায় ইংরেজি শিখে শ্রীরামপুর ব্যাপটিষ্ট মিশন প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানায় কম্পোজিটরের চাকরিতে যোগ দেন। পরে তিনি স্বাধীন ভাবে জীবিকা অর্জনের জন্য উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের গোড়ার দিকে কলকাতায় চলে আসেন এবং বই প্রকাশ ও বই বিক্রয় ব্যবসায় নেমে পড়েন নব উদ্যমে।
তাঁর সম্পাদিত প্রথম বাংলা বইয়ের নাম 'অন্নদামঙ্গল'। যেটি ১৮১৬ সালে মুদ্রিত হয়েছিল। তিনি নিজের কাজের সুবিধার জন্য একটি মুদ্রাযন্ত্র স্থাপন করেন। এটি 'বাঙ্গাল গেজেট প্রেস' নামে পরিচিত ছিল। তৎকালীন অনেক প্রসিদ্ধ গ্রন্থকারের বই এই মুদ্রণযন্ত্রে মুদ্রিত হত৷ এছাড়া তিনি বাংলা ভাষায় একটি ইংরেজি ব্যাকরণ, ব্যাখ্যা ও টীকাসহ মূল ভগবদগীতা, চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কে কয়েকটি বই প্রভৃতি মুদ্রিত ও প্রকাশিত করেন৷ বইয়ের ব্যবসায় তিনি বিশেষ অর্থলাভ করেছিলেন। গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য সম্পাদিত বাঙ্গাল গেজেট নামের বাংলা ভাষায় মুদ্রিত সাপ্তাহিক পত্রিকাটি প্রথম বাংলা সংবাদপত্র বলে অনুমিত হয়।
সংবাদপত্রের জনক হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য। এবার তাঁর স্মৃতিতে গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালা তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে এ রাজ্যের পর্যটন দপ্তর। এই প্রকল্পের কাজে খরচ হবে মোট নয় লক্ষ টাকা।
গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের জন্মভিটা বহড়াতে বর্তমানে রয়েছে তাঁর নামাঙ্কিত স্মৃতিফলক। এমনকি এই স্মৃতিফলকের পাশে রয়েছে একটি মন্দির। যার গা ঘেঁষেই ছিল তাঁর ভিটে। যদিও বহু বছর আগেই সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। নদীপথে কলকাতা তো বটেই, রাজ্যের নানান প্রান্তে যাতায়াত ছিল তাঁর। নিজের গ্রামেও তিনি একটি ছাপাখানা তৈরি করেছিলেন। যে কারণে বহড়া গ্রামকে অনেকে 'ছাপাখানাডাঙা' বলেও ডাকেন। এই এলাকার বাসিন্দাদের আক্ষেপ, বাংলা মুদ্রণশিল্প ও সংবাদপত্রে যাঁর এমন ভূমিকা, তাঁর স্মৃতিতে তাঁর নিজের গ্রামেই কিছু গড়ে উঠেলো না।
এখানকার বিডিও সৌমিক বাগচির মতে, "বহড়া গ্রামে বর্তমানে কোনো ছাপাখানার অস্তিত্ব নেই। তবে আমরা চেষ্টা করবো গঙ্গাকিশোরের কিছু জিনিসপত্র জোগাড় করে সংগ্রহশালাতে রাখার।"
গঙ্গাকিশোর স্মৃতিরক্ষা কমিটির তরফে দ্বারকানাথ দাস বলেন, "বহুদিন ধরে আমরা গঙ্গাকিশোরের স্মৃতিতে গ্রামে কিছু গড়ে তোলার কথা বলছি। সংগ্রহশালা এবং গ্রন্থাগার হলে ভালোই হবে।"
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment