এভারেস্টের একদিন পরই লোৎসে শৃঙ্গ জয় করে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন বঙ্গতনয়া পিয়ালি বসাক
এমন সাফল্যের নজির খুব একটা দেখা যায় না। চন্দননগরের বাসিন্দা পিয়ালি বসাক পেলেন জোড়া সাফল্য। এভারেস্টের পর এবার লোৎসে শৃঙ্গ জয় করলেন বাঙালি পর্বতারোহী পিয়ালি বসাক। গত মঙ্গলবার রাতে লোৎসে শৃঙ্গে পা রাখেন তিনি৷ পিয়ালি বসাকের এমন চমকপ্রদ সাফল্যে উচ্ছ্বসিত এ রাজ্যের পর্বতারোহীরা।
একদিনের ব্যবধানে দুটি আট হাজারি শৃঙ্গ জয় করা এককথায় অসম্ভব। যদিও সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন পিয়ালি বসাক। গত রবিবার সকালে তিনি পা রেখেছিলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টে। একদিন পর, মঙ্গলবার দুপুরে তিনি এবারের অভিযানের দ্বিতীয় লক্ষ্যও পূরণ করলেন৷ পা রাখলেন লোৎসে শৃঙ্গের শীর্ষে যার উচ্চতা ৮,৫১৬ মিটার৷ পৃথিবীর চতুর্থ উচ্চতম শৃঙ্গ হলো লোৎসে।
পিয়ালি বসাক খুবই জেদী মেয়ে। তিনি এমনই একজন মানুষ যিনি নিজের লক্ষ্যপূরণ না করা পর্যন্ত থাকতে রাজি নন। আর্থিক সংকট তো তাঁর প্রতি পদে পদে বাধা ছিলই। সাথে তাঁর অভিযানে বাধ সেধেছিল বৈরী আবহাওয়া। ফলে কিছুটা হলেও তাঁর লোৎসে অভিযান নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। তিনি অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করলেও লোৎসে শৃঙ্গ জয় করেছেন অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এভারেস্টে ৪০০ মিটার বাকি থাকার পূর্বে তাঁকে প্রাণ বাঁচাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হয়েছিল।
গত বছর তিনি পৃথিবীর সপ্তম উচ্চতম শৃঙ্গ ধৌলাগিরি জয় করেন। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে যে পর্বতের উচ্চতা ৮,১৬৭ মিটার। শ্বেত শুভ্র বরফে ঢাকা এই পর্বতে আরোহণ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বহু এক্সপ্লোরার। এই পর্বতে পদে পদে রয়েছে মৃত্যুর হাতছানি। এই পর্বতের চূড়ায় পৌঁছানো কঠিন থেকে কঠিনতর। ১৯৬০ সালে একদল ইউরোপীয় এক্সপ্লোরার প্রথম ধৌলাগিরির শীর্ষে আরোহণ করেছিলেন। ধৌলাগিরি শৃঙ্গে প্রথম বাঙালি তথা প্রথম ভারতীয় হিসেবে পা রাখেন পিয়ালি বসাক।
অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই ধৌলাগিরিতে পা রেখে বিশ্বরেকর্ড গড়েন পিয়ালি বসাক। অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া ৮০০০ মিটার উচ্চ পর্বতশৃঙ্গে আরোহণ করা কল্পনার বাইরে। এর আগে বাংলার কয়েকজন এক্সপ্লোরার এখানে ভ্রমণ করতে গিয়ে তুষারের বিছানায় মৃত্যুমুখে পতিত হন৷ কিন্তু পিয়ালি বসাক বিপদকে পায়ের ভৃত্য করে ধৌলাগিরির চূড়ায় পৌঁছে যান অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই।
এভারেস্ট, লোৎসে ও ধৌলাগিরি সব মিলিয়ে মোট সাত সাতটি বিশ্বরেকর্ড গড়লেন পিয়ালি বসাক। এর আগে ২০১৮ সালে তিনি মানাসলু শৃঙ্গে পা রেখে ইতিহাস গড়েছিলেন। মানাসলু বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। পাহাড়-পর্বতে আরোহণ করার নেশা তাঁর প্রচণ্ড থাকলেও তিনি পেশায় একজন স্কুলশিক্ষিকা৷ চন্দনগরের কানাইলাল স্কুলে শিক্ষকতা করেন তিনি। হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট থেকে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়-পর্বতে চড়ার জন্য প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
এতোবড়ো জয়ের পরও উদ্বেগ কাটছে না পিয়ালি বসাকের কারণ আয়োজক সংস্থার কাছে তাঁর বকেয়া এখনও ১৪ লক্ষ টাকা। যা না মেটালে এই কৃতিত্বের শংসাপত্র তিনি আদৌ পাবেন কি না, না নিয়ে সংশয়ের মেঘ জমা হচ্ছে। ১৪ লক্ষ টাকা বকেয়া শোধ করাই এখন তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। তবে ঘরের মেয়ের অনন্য নজির ও সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁর এই সাফল্যে সহকর্মী থেকে শুভাকাঙ্ক্ষীরা সকলেই আনন্দিত।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment