চলে গেলেন 'আমার ভাইয়ের মায়ের রক্তে রাঙানো' গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী
একুশে ফেব্রুয়ারী যে গানে আমাদের নতুন সকাল শুরু হয় সেই গানের রচয়িতা আজ বিদায় নিলেন৷ না ফেরার দেশে আজকে পাড়ি দিলেন 'আমার ভাইয়ের মায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী' গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী। আজ সকাল ৬টা বেজে ৪০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।
তাঁর পরিবার সূত্রে খবর তিনি বহুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানান জটিল সমস্যায় ভুগছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ভর্তি ছিলেন লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে। সাংবাদিক হিসেবেও তিনি বেশ পরিচিত লাভ করেছিলেন। ইংল্যান্ড প্রবাসী স্বনামধন্য এই সাংবাদিক বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত পত্রিকা সাপ্তাহিক জয় বাংলার প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন।
মাসিক সওগাত, দিলরুবা, মেঘনা, ইত্তেফাক, আজাদ, জেহাদ ও পূবদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। কলকাতাতেই সাপ্তাহিক জয় বাংলায় লেখালেখি করেন৷ এ সময় তিনি কলকাতায় দৈনিক আনন্দবাজার ও যুগান্তর পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি দৈনিক জনপদ বের করেন৷
১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান৷ নিজ দেশে ফেরার পর তাঁর স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় তাঁকে নিয়ে ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে লন্ডন যান। এরপর থেকে তাঁর প্রবাস জীবনের শুভারম্ভ হয়। সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। 'চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান', 'সম্রাটের ছবি', 'ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা'সহ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় ৩০। এছাড়াও তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটকও লিখেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'পলাশী থেকে ধানমন্ডি', 'একজন তাহমিনা' ও 'রক্তাক্ত আগস্ট'।
বাংলাদেশের সাংবাদিক জগতের একজন দিকপাল ছিলেন তিনি। তাঁর লেখনীতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক জ্বলন্ত চিত্র ও সমসাময়িক বিষয় উঠে আসতো৷ সারা জীবন তিনি নিজের দেশের জন্য কাজ করে গেছেন। আজ তিনি আর নেই। বহুদিন শরশয্যায় আছন্ন থেকে আজ চিরঘুমে চলে গেলেন তিনি।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment