Header Ads

'স্বপ্ন', 'সন্তান' ও 'মনুষ্যত্ব' শর্টফিল্মের জন্য ৫০ টি পুরস্কার পেয়ে রেকর্ড করলেন সূর্যদ্বীপ


ছবি বানানোর একটা আলাদা খিদে তাঁর। একবুক স্বপ্ন নিয়ে নিজের মতো করে শর্টফিল্ম বানান তিনি। বেহালার চড়কতলার বাসিন্দা সূর্যদ্বীপ যিনি ইতিমধ্যেই 'আইপিএল ফিভার', 'সম্পর্কের বাঁধন', 'সন্তান', 'মনুষ্যত্ব' ও 'স্বপ্ন' নামক পাঁচ পাঁচটি শর্টফিল্ম বানিয়েছেন। যে শর্টফিল্মগুলো তাঁর খ্যাতি বাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর পরিচালিত 'স্বপ্ন', 'সন্তান' ও 'মনুষ্যত্ব' এই তিনটি ছবি তাঁর বর্তমানে জীবনের সবচেয়ে বড়ো মাইলস্টোন। কারণ এই তিনটি ছবির জন্য তিনি অর্জন করে ফেলেছেন মোট ৫০ টি পুরস্কার। 


অল্প শর্টফিল্ম বানিয়ে ৫০ টি পুরস্কার পাওয়ার রেকর্ড খুব কম পরিচালকের ঝুলিতেই এসেছে। একজন দক্ষ চলচ্চিত্র পরিচালক হতে গেলে যে আত্মবিশ্বাস দরকার সেই আত্মবিশ্বাস এখন তাঁর বেড়ে গেছে। যৎসামান্য বাজেটে অসাধারণ ছবি বানান তিনি। ছবি বানাতে গিয়ে কিছুটা তাঁর আর্থিক সমস্যা হয় ঠিকই কিন্তু সেসব আর তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি৷ কন্টেন্টের জোরেই তিনি নিজের স্বপ্নপূরণের দিকে এগিয়ে চলেছেন। 

সালটা ২০১৮। হঠাৎ শর্ট ফিল্ম বানানোর ভূত মাথায় চেপে বসে সূর্যদ্বীপের। তাই তিনি দেরি না করে চটপট একটা গল্প লিখে ফেলেন আইপিএল নিয়ে। তিনি আইপিএল দেখতে ভীষণ ভালোবাসেন তাই হয়তো অন্য কিছু না ভেবে আইপিএল নিয়েই একটা শর্ট ফিল্মের গল্প লিখে ফেললেন তিনি। সামান্য টিউশনি পড়িয়ে তা দিয়ে তিনি কলেজের মাইনে ও প্রাইভেট শিক্ষকদের মাইনে দিয়ে যতটুকু অর্থ হাতে থাকতো সেই দিয়েই একটা হ্যান্ডিক্যাম ভাড়া নিয়ে তিনি শুরু করেন ছবির শুটিং। সৌরভ নামের তাঁর এক ভাই তাঁর এই ইচ্ছেকে সমর্থন করেন এবং সিনেমাটোগ্রাফির পুরো দায়িত্বটা  নিজের কাঁধে তুলে নেন। তাঁর পাড়ার কয়েকটি ছোট ছোট ভাই-বোন, ছাত্রদের নিয়েই যারা একেবারেই নতুন তাদেরকে দিয়েই তিনি অভিনয় করান। তিনি নিজে যতটুকু এডিটিং পারেন সেইমতো শর্টফিল্ম এডিট করেন। এভাবেই তিনি তাঁর প্রথম শর্টফিল্ম দাঁড় করান। মুক্তি পায় তাঁর পরিচালিত প্রথম শর্টফিল্ম 'আইপিএল ফিভার'। যে ছবি বহু মানুষের কাছে প্রশংসা ছিনিয়ে নেয়।  

'আইপিএল ফিভার' ছবির সাফল্যের পর হাত খরচা থেকে একটু একটু করে টাকা বাঁচিয়ে তিনি বানালেন  'সম্পর্কের বাঁধন', 'সন্তান' ও 'মনুষ্যত্ব' নামের তিনটি শর্টফিল্ম। অনেক বাধা বিপত্তি কাটিয়ে তিনি নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন৷ তাঁকে সমালোচনারও শিকার হতে হয়েছে, যদিও তাতে তিনি বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করে নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে এগিয়ে চলেছেন। 

সূর্যদ্বীপ লিটারেসি প্যারাডাইসকে বলেন "ছবি বানানোর কাজে আমি বাড়িতে খুব একটা সাপোর্ট না পেলেও আমার ছোট পিসি এবং ঠাকুমা আমাকে এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দেন। এমনকি আমার স্কুলের অনেক বন্ধু-বান্ধবরাও আমাকে উৎসাহ দিয়েছে। এছাড়াও আমার বেশকিছু পাড়ার দাদা-দিদি, বন্ধুরা এ ব্যাপারে মানসিকভাবে আমার পাশে ছিল। যাদের মধ্যে পুষ্পিতা দি, বন্ধু রাহুল ঠাকুর চক্রবর্তী, সুবীর মুখার্জি দা ও সৌনক দা অন্যতম। তবে বেশিরভাগ মানুষ বলতো এসব করে কি আর পেট ভরবে, কাজবাজ করতে হবে। পাড়া-প্রতিবেশীরা ও এই নিয়ে বেশ ঠাট্টা তামাশা করতো। আসলে তারা তো জানতো না জীবন ধারণের জন্য সামান্য উপার্জন করেও শর্ট ফিল্ম বানিয়ে মানসিক শান্তি পেলেই বেশ ভালোভাবেই জীবন কেটে যায়। 


সত্যি কথা বলতে গেলে নিয়মিত অফিসের চাকরি আমার একেবারেই পছন্দ ছিল না। তাই কখনো কোথাও কোন ইন্টারভিউ দিইনি। ভুলবশত একবার ইন্টারভিউ দিয়ে ফেলেছিলাম চাকরিও পেলাম কাস্টম হাউসে তবে তা পার্মানেন্ট নয় ক্যাজুয়াল। অফিসের কাজ করে দেখলাম ঠিক যেন মন বসছিল না। আমার তখন মনে হচ্ছিল জীবনটা কোথাও যেন থেমে যাচ্ছে। ছবি বানানোর স্বপ্নটা ধীরে ধীরে বাস্তবের কাছে হেরে যাচ্ছে। তাই কয়েক মাস চাকরি করার পর চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। সামান্য কয়েকটা টিউশন পড়িয়ে আর সঞ্চালনার কাজ করে পেট চালাতে লাগলাম। এই ভাবেই বেশ কাটছিল তারপর বিশ্বজিৎ চৌধুরী নামক এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার আলাপ হয় আমার এক বন্ধু সুমন অধিকারীর মাধ্যমে।  তিনিও আমার মত সিনেমা পাগল। আমি শর্ট ফিল্ম বানাই দেখে আমাকে বলল ওনার গল্পের উপর একটি শর্টফিল্ম বানানো হবে যেটা আমাকেই পরিচালনা করতে হবে। গল্পটি আমার বেশ পছন্দ হলো। তাই লেগে পড়লাম 'স্বপ্ন' নামক একটি শর্টফিল্ম বানানোর কাজে। কখনো ভাবিনি এই গল্পটা এত মানুষের কাছে ভালোবাসা পাবে।

'স্বপ্ন', 'সন্তান' ও 'মনুষ্যত্ব' আমার জীবনের তিনটি মাইলস্টোন। সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গার শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পাঠাতে লাগলাম এই তিনটে ছবি। বেশ অনেকগুলো জায়গাতেই পুরস্কৃত হলো। আর আজ সর্বমোট পঞ্চাশটি পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছে এই তিনটি শর্টফিল্ম। সত্যি কখনো ভাবিনি এই দিনটা আসবে। আজ সত্যি ভীষণ ভালো লাগছে। সত্যি কথা বলতে গেলে আজ যদি আমার ঠাম্মা বেঁচে থাকতো সবথেকে বেশি খুশি হতেন তিনি, কিন্তু তিনি আজ নেই তবে ওনার আশীর্বাদ সর্বদা আমার সঙ্গে আছে তাই বোধহয় এতবড় সাফল্য।"

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments