"বাঙালি ব্যবসা পারে না"- এই বদ্ধমূল ধারণাকে ভাঙছেন ডব্লুটিএফের মালিক সায়ন চক্রবর্তী
"বাঙালি ব্যবসা পারেনা"- এই বদ্ধমূল ধারণাকে ভেঙে দিচ্ছেন এই মুহূর্তে বাংলার অন্যতম তরুণ উদ্যোগপতি সায়ন চক্রবর্তী। তিনি গণমাধ্যমে বাংলার তরুণ প্রজন্মকে স্টার্টআপের নানান ধারণা দিচ্ছেন৷ তাঁর আত্মবিশ্বাস একদিন বাঙালি ভারতের বুকে সবচেয়ে বেশি entrepreneur-এর জন্ম দেবে৷ তিনি বাংলার নব্য প্রজন্মের ব্যাচেলরদের একটি কথা বারংবার বলে থাকেন "নিজেকে বেকার মনে করে বাড়িতে কখনোই বসে থাকবে না। সর্বদা চেষ্টা করবে কিছু একটা করার। কোনো কিছু বড়ভাবে করতে না পারলে ছোটোভাবেই শুরু করো। কিন্তু স্বপ্নটা বড় করেই দেখতে শেখো। একদিন না একদিন তুমি সফল হবেই।"
২০২১ সালের অক্টোবরে রতন টাটা সায়ন চক্রবর্তীর ব্যবসার প্রশংসা করে তাঁকে একটি চিঠিও লিখেন। সেখানে তিনি জানান সায়নের স্পিরিট ও ব্যবসার প্রতি তাঁর উদ্যমে তিনি মুগ্ধ। সায়ন চক্রবর্তী কী এমন ব্যবসা করছেন যে রতন টাটার মতো শিল্পপতিরাও তাঁর প্রশংসা করছেন? তাহলে আসুন সায়ন চক্রবর্তীর ব্যাপারে বিশদে জানা যাক৷
মাত্রা তেরো বছর বয়সে ২৫০০ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন কলকাতার বাসিন্দা সায়ন চক্রবর্তী। আজকে ২৭ বছর বয়সে এসে তিনি হয়েছেন কয়েক কোটি টাকার মালিক। তিনি জন্ম দিয়েছেন 'হোয়ার'স দ্য ফুড' বা 'ডব্লুটিএফ' নামক একটি কোম্পানির৷ যার সূচনা সামান্য স্যান্ডউইচ বিক্রি করার মধ্য দিয়েই। কলকাতা শহরের বুকে তিন-তিনটে রেস্তোরাঁর মালিক তিনি৷ সল্টলেক সেক্টর ফোর, নাগেরবাজার ও সাদার্ন অ্যাভেনিউতে রমরমিয়ে চলে ডব্লুটিএফ।
ডব্লুটিএফ এখন কলকাতার বেশ পরিচিত নাম। এর কারণ অবশ্য একটাই সায়ন চক্রবর্তীরা যেটা করতে চেয়েছেন সেটার তাগিদ আছে কলকাতায়। ডব্লুটিএফ সস্তায় স্বাস্থ্যকর ভালো খাবার ক্রেতাদের হাতে তুলে দেয়। একশো টাকার নীচে পেটপুরে খাওয়ার বন্দোবস্ত করে দেন সায়ন বাবু৷ অর্ডার দিলেই মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে যায় খাবার৷ অফিস কলেজ ক্যান্টিনের সঙ্গে ডব্লুটিএফ গাঁটছড়া বেঁধে ব্যবসা করে। এই কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসার, হেড সেফ, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, সিটিও এবং সিইও সকলেই বাঙালি।
সায়ন চক্রবর্তীর বাবাও একজন ব্যবসায়ী। শহরে যার বেশ নামডাক আছে। তিনি নিজে ব্যবসায়ী হলেও নিজের ছেলেদের আমলা বানাতে চেয়েছিলেন। সায়ন চক্রবর্তী বাড়ির বড় ছেলে। তিনি পড়াশোনাতে খুব একটা ভালো থাকেননি। নবম শ্রেণির পরীক্ষায় হঠাৎ করে ফেল করে যান তিনি। যা দেখে তাঁর বাবার মনে হয়েছিল ছেলেটার কিচ্ছু হবে না, তাঁর সব স্বপ্ন শেষ। সায়নবাবুর নিজেরও মনে হয়েছিল জীবনটা বুঝি এখানেই সমাপ্ত হয়ে যাবে। তবুও নতুন করে সব শুরু করলেন। ক্লাসরুমের পিছনে বসে সমস্ত পরিকল্পনা করে যাদবপুরে মাত্র তেরো বছর বয়সে একটি ছোট্ট ঘরে প্রথম রেস্তোরাঁ শুরু করেন তিনি ও তাঁর বন্ধুরা৷ কিন্তু স্বপ্ন ছোঁয়ার ঠিক আগের মুহূর্তেই সব ভেস্তে যায়। ভেঙে যায় তাঁর স্বপ্ন। তিনি শিকার হলেন প্রতারণার। এরপর বাবার অনুরোধে সেন্ট জেভিয়ার্সে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়তে যান তিনি। যদিও ব্যবসার নেশা কিছুতেই মাথা থেকে বের করতে পারলেন না৷ তিনি অদম্য উৎসাহ ও জেদ নিয়ে স্থির করলেন খাবারের ব্যবসা আরম্ভ করবেন। ব্যাস, আর ঘুরে দাঁড়াতে হয়নি তাঁকে। যাদবপুরের ছোট্ট রান্নাঘর থেকে যাত্রা শুরু হলো ডব্লুটিএফের।
ডব্লুটিএফের লোগোযুক্ত প্রিন্টেড টিশার্টও বানিয়ে ফেললেন সায়ন বাবু। মার্কেটিং-এরও টিম বানিয়ে ফেললেন তিনি৷ তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় আইডিয়াটি তাঁর বাবা সুজিত চক্রবর্তীর একেবারেই পছন্দ হয়নি। এর জন্য তিনি কিছুটা ভেঙে পড়লেও আস্তে আস্তে করে নিজেকে সামলে নেন। তিনি ও তাঁর টিম ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে থাকেন। তাঁরা দেখেছেন কম দামে স্বাস্থ্যকর খাবার কলকাতার খুব কম রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায়। এই বিষটিকেই তাঁরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে থাকেন। কম দামে স্বাস্থ্যকর খাবার প্রদানের ভাবনাকে সুন্দর করে কাজে লাগালেন তাঁরা। তারপর থেকে ডব্লুটিএফ বেশ জনপ্রিয় হয়ে যায়। তিনি "ডব্লুটিএফ- জাস্ট হ্যাপেনড" নামক একটি বইও লিখেছেন, যা অগণিত ছোটো-খাটো ব্যবসায়ীকে ব্যবসার নিত্যনতুন আইডিয়া দিতে সাহায্য করছে।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment