কলকাতার একমাত্র মহিলা টু-হুইলার মেকানিক সোনালি মিস্ত্রি ওরফে 'মেকানিক দিদি'
কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা আনোয়ার শা রোড। সেই আনোয়ার শা রোডের মোড়ে বাঙুর হাসপাতালের উল্টোদিকে আছে একচিলতে গ্যারেজ 'আব্দুল কালাম অটো ক্যাপিটাল'। এরকম গ্যারেজ কলকাতায় ছড়াছড়ি। কিন্তু এই গ্যারেজটি একটু ব্যতিক্রম। কী সেই ব্যতিক্রম? কারণ এই গ্যারেজে দিনরাত হাড়খাটুনি পরিশ্রম করে মোটরবাইক, স্কুটার সারাই করছেন সোনালি মিস্ত্রি নামের এক মহিলা। যাকে সকলে বলে থাকেন 'মেকানিক দিদি'। সোনালি মিস্ত্রি কলকাতার প্রথম এবং একমাত্র টু হুইলার মেকানিক৷ দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে তিনি যুক্ত এই পেশার সাথে।
স্কুলে পড়ার সময় সোনালি মিস্ত্রি মোটর মেকানিক আব্দুল কালাম ওরফে শঙ্করের প্রেমে পড়েন। স্থানীয় এক মাজারে গিয়ে তিনি আব্দুল কালামকে বিয়ে করেন৷ যদিও এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি তাদের পরিবার। তাই দুজনে দুজনের পরিবার-পরিজনদের ত্যাগ করে সংসার পাতেন৷ স্বামীর গ্যারেজেই মোটর মেকানিকের নানান কাজ তিনি শিখে নেন। ততদিনে তিনি জন্ম দিয়ে ফেলেছেন দুই সন্তানের। অতঃপর বাড়তি রোজগারের আশায় স্বামীর সঙ্গে জোরকদমে গ্যারেজ পরিচালনা করতে থাকেন তিনি। যে কাজ একজন নারীর জন্য শক্ত সেই কাজই তিনি বেছে নিয়েছেন।
সোনালি মিস্ত্রি একা হাতে দক্ষতার সঙ্গে মোটরবাইক, স্কুটার সারাই করেন। এ কাজ করতে তাঁর খুবই ভালো লাগে। যে কোনো ধরনের কঠিন কাজ যা সকলে পারেন না, তা তিনি একাকী করে দেখান। একজন নারী হয়ে তিনি মোটর মেকানিকের কাজ করছেন এ ব্যাপারটা অনেকে মন্দ চোখে দেখলেও তিনি তা পরোয়া করেন না। নিজের কাজ সাহসীকতার সঙ্গে তিনি সম্পন্ন করে থাকেন। বর্তমানে চার থেকে পাঁচজন মেকানিক তাঁর কাছে মোটর মেকানিকের কাজ শিখছেন। এভাবেই তিনি আজ নারীশক্তির অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।
এখন কেউ দু-চাকা এনে সমস্যার কথা বললে, গাড়িতে হাত না দিয়েই সমাধান বাতলে দেন তিনি। বছর একান্নর লম্বা, ফর্সা মহিলা সোনালি মিস্ত্রিকে একদিন একজন বলেন, "গাড়ির ফিউজ বারবার উড়ে যাচ্ছে।" যা শুনে তিনি বলেন, "দেখ তো, হর্নের জ্যাকটা গাড়ির বডি টাচ করছে কি না।" ঠিক তাই। লাইনটা কেটে দিতেই সব মুশকিলআসান৷ নিজের কাজের ব্যাপারে ঠিক এতোটাই আত্মবিশ্বাসী সোনালি মিস্ত্রি।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment