৪৫ বছরের রেকর্ড ভাঙলো কলকাতা বইমেলা, বিক্রি হলো ২৩ কোটি টাকার বই
বাঙালির আবেগের আরেক নাম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। যা বর্তমান সময়ে বাঙালির অন্যতম পার্বণ। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে ঢুকে পড়েছে বইমেলা। দীর্ঘ দুই বছর পর কোভিডের ধাক্কা সামলে আয়োজিত হলো কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। বহুদিন পর আবারো বাঙালি সমাজ ডুবে গেল নিত্যনতুন বইয়ের গন্ধে। কোভিডের অধ্যায় কাটিয়ে সব কিছু স্বাভাবিক হওয়ার পরে বইমেলাকে যেন বাঙালির সম্পূর্ণ নতুন লেগেছে। এ বছরের বইমেলা বাংলা ও বাঙালির মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।
আজকাল আমরা প্রায়শই বলে থাকি 'ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বইবিমুখ, আগামীদিনে বই থাকবে না', কিন্তু এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করলো ৪৫ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার রেকর্ড ভিড় ও ব্যবসা। অন্যান্য বছরের তুলনায় ভিড় একটু বেশিই চোখে পড়েছে৷ নতুন বছরটা ভালোভাবে শুরু হলেও এ বছর বইমেলা খানিকটা দেরিতেই আয়োজিত হলো। যার ফলে অনেক প্রকাশক ও লেখক-লেখিকার মনে একটা চাপাভয় কাজ করছিল বই বিক্রি নিয়ে। যদিও সেই ভয় পুরোপুরি ভাবে কেটে গেছে। মেলার প্রথমদিন থেকে শেষদিন হু হু করে বই বিক্রি হয়েছে। দেখার মতো বিষয় হলো অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বাংলা বই একটু বেশিই বিক্রি হয়েছে।
২০২২ সালের কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা ভেঙে দিয়েছে ৪৫ বছরের বই বিক্রির রেকর্ড। প্রকাশনা সংস্থাগুলির স্টল কিংবা গিল্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ বছর ২০ লক্ষ মানুষ বইমেলায় এসেছেন এবং বইমেলাতে মোট ২৩ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। সুতরাং নেট দুনিয়ার ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে যতই বাঙালি পিডিএফ বা ই-বুকে পড়াশোনায় বুঁদ থাকুন না কেন, বইয়ের পাতায় মুখ লুকিয়ে পড়ার আনন্দ বাঙালি এখনও ভোলেনি৷ তাই কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা আজীবন মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকবে তার ঐতিহ্য নিয়ে।
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু দে জানান, "বইমেলায় ২৩ কোটি টাকার বেশি বই বিক্রি হয়েছে।" একইসঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানান, "২৩ কোটি টাকা পেরিয়ে গিয়েছে। শেষবার ছিল ২০ কোটি টাকা। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকেরা সবাই বলেছেন গতবারের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বই বেশি বিক্রি হয়েছে।"
যে ছেলেটি সারাক্ষণ ইউটিউবে আছন্ন বা যে মেয়েটি ইনস্টাগ্রামে সারাক্ষণ রিলস বানাচ্ছে কিংবা যে ছেলেটা পিডিএফ বুক ছাড়া অন্য কিছু জানেনা অথবা যে মেয়েটার পড়াশোনায় ভালো মন নেই; তারাও সকলে এবার ভিড় জমিয়েছেন কলকাতার বইমেলাতে। নিত্যনতুন প্রকাশকদের সম্পাদিত বইও প্রচুর বিক্রি হয়েছে। ছোটো-বড় প্রকাশনীর স্টল থেকে লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ন সর্বত্র ভিড়ে টইটম্বুর ছিল। অবশেষে চৌদ্দদিনের বইমেলাতে এক বালতি আবেগকে সঙ্গে নিয়ে প্রকাশক-লেখক-লেখিকা এবং পাঠক-পাঠিকার চোখের জলে সমাপ্ত হলো কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। আবারো বইমেলার জন্য একটা বছরের অপেক্ষা।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment