চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল দেওয়ার মনোনয়নের জন্য নিযুক্ত হলেন বাঙালি বিজ্ঞানী অসীম দত্তরায়
বাঙালির বিশ্বজয় কখনো থেমে থাকে না। মাঝে মধ্যেই সংবাদপত্রে ঢুঁ মারলেই দেখা যায় কোনো না কোনো বাঙালি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। যারা বলেন বাঙালিরা সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে যাচ্ছে তাদের ভুল প্রমাণিত করে একের পর এক সাফল্যের নজির তৈরি করছে বাঙালিরা। আবারো এক নজরকাড়া সাফল্য বাঙালির। একজন বাঙালি নোবেল পেলে স্বাভাবিকভাবেই গর্বে ভরে যায় বাঙালির বুক। তাঁকে নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয় এবং আলাপ-আলোচনাও চলে। কিন্তু কে নোবেল পাবেন সেটা স্থির করার দায়িত্ব যদি একজন বাঙালি পান কেমন হয়? নিশ্চয় দারুণ হয়। এবার সেটাই করে দেখালেন একজন বাঙালি। নদীয়ার গাঙনাপুরের গোপীনগরের বাসিন্দা অসীম দত্তরায় পেলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল দেওয়ার জন্য মনোনয়নের সুযোগ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমরা সকলেই জানি বাঙালির অবদান অনস্বীকার্য। আধুনিক পদ্ধতিতে শব ব্যবচ্ছেদের জনক মধুসূদন গুপ্ত। সিরোসিস অফ লিভার ইন চিল্ড্রেনের গবেষক নীলরতন সরকার। ভারতের টেস্টটিউব বেবির জনক সুভাষ মুখোপাধ্যায়। প্রখ্যাত বাঙালি চিকিৎসক তথা বিজ্ঞানী মণি ভৌমিক প্রথমবার পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণ করে দেখান যে, এক্সাইমার লেজারের প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে। চক্ষু চিকিৎসাকে অনেক সহজ করে দেয় এই আবিষ্কার। কলেরা, ডায়রিয়ার মতো জটিল রোগে ব্যবহৃত ও আর এস বা ওরাল রিহাইড্রেসেন স্যালাইন আবিষ্কার করেন হেমেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জী।কালাজ্বরের ওষুধ ইউরিয়া স্টিবামাইনের আবিষ্কর্তা বিজ্ঞানী উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। বিজ্ঞানী শুভ রায় কৃত্রিম কিডনির আবিষ্কারক। এছাড়াও প্রখ্যাত চিকিৎসক রাধাগোবিন্দ কর, কাদম্বিনী বসু, মহেন্দ্রলাল সরকার, লালমাধব মুখোপাধ্যায়, বনবিহারী মুখোপাধ্যায়, শম্ভনাথ দে'র নাম প্রায় সকলেই শুনেছেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানী অসীম দত্তরায় বর্তমানে থাকেন নরওয়েতে। তিনি সেখানকার অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। নদীয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মেও চিকিৎসা বিজ্ঞানে তিনি নিজের খ্যাতি তৈরি করেছেন। এখন প্রতি বছর তিনি প্রচারের আড়ালে থেকে নোবেল কমিটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বছরের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারগুলোর সন্ধান দিয়ে চলেছেন। চলতি বছরেও নোবেল কমিটি তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
এই নিয়ে মোট ছয়বার নোবেল কমিটি তাঁর নাম চেয়েছে। অসীম দত্তরায়ের হাত ধরে কয়েকজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইতিপূর্বে নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন। যদিও নোবেল কমিটির নিয়ম অনুযায়ী, ঠিক কারা তাঁর হাত ধরে নোবেল পেয়েছেন তা জানা যায়নি৷ সম্প্রতি নোবেল কমিটির সাধারণ সম্পাদক তথা কারলিনস্কা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক থমাস পার্লমান ইমেলের মাধ্যমে অসীমবাবুকে নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রার্থী মনোনীত করার আহ্বান জানান।
১৯৮১ সালে অসীমবাবু চিকিৎসা বিজ্ঞানের উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা পাড়ি দেন। তিনি এখন অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের পাশাপাশি বিশ্ববিখ্যাত ফুড অ্যান্ড রিসার্চ জার্নালের মুখ্য সম্পাদক। তিনি বিশ্বের নামীদামী সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-অধ্যাপক ও মুখ্য বৈজ্ঞানিকের ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর নামে রয়েছে পাঁচটি আন্তর্জাতিক পেটেন্ট। তাঁর আবিষ্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম টমেটো ও কিউই ফলের অ্যান্টি থ্রম্বোটিক ফ্যাকটর। অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা থাকলে বলা হয় অ্যাসপিরিন নিতে কিন্তু এর অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। তিনি টমেটো ও কিউই ফলের মধ্যে এমন এক উপাদানের হদিস দেন যা হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতাকে একেবারেই কমিয়ে দেয়। তাঁর নামে ৩২৬ টি গবেষণাপত্র রয়েছে।
হাজার ব্যস্ততার কারণে নিয়ম করে বছরে একবার নিজের জন্মভূমির মাটি স্পর্শ করেন তিনি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পাবেন কে তার মনোনয়নের দায়িত্ব আরো একবার পাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমি অত্যন্ত গর্বিত। একজন বাঙালি বিজ্ঞানী হিসেবে এটা একটা বিরাট সম্মান আমার কাছে। নোবেল কমিটি এ বছরও চিকিৎসা বিভাগে নোবেল পুরস্কারের জন্য আমার থেকে নাম চেয়েছে। আমি তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবো।"
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment