নীল বিদ্রোহী রহিমুল্লাহ হত্যার প্রতিবাদে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
১৮৫০-৬০ এর দিকে প্রায় সারা বাংলা জুড়ে নীল চাষ করার জন্য ইংরেজদের অত্যাচারের সন্মুখীন হয় বাংলার মানুষ। মেদিনীপুর থেকে সুন্দরবন কোনো জায়গাই বাদ যায়নি নীলকরদের অত্যাচার। এক-ই সাথে ছিল ইংরেজদের দালালি করা জমিদার ও মোড়লদের অত্যাচার।
সারা বাংলার মতোই সুন্দরবনের মোড়েলগঞ্জে (বর্তমানে খুলনায় অবস্থিত) নীলবিদ্রোহ শুরু করেন বিখ্যাত লাঠিয়াল শাহীদ রহিমুল্লাহ। ১৮৬১ সালে জমিদার মামুন তালুকদার অত্যাচারী ডেনিস হ্যালের সাহায্য নিয়ে চাষীদের জমি দখল করার কাজ শুরু করে নীল চাষ করানোর জন্য। তখন সমস্ত চাষীকে একত্র করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন লাঠিয়াল শাহিদ রহিমুল্লাহ। তিনি জমি দখলে বাধা দেন। হ্যালের পোশা লাঠিয়াল রামধন মালোকে পিটিয়ে হত্যা করেন চাষীরা।
এই ঘটনার কয়েক দিন পরেই (১৮৬১ সালের ২৫ শে নভেম্বর) মাঝরাতে অত্যাচারী হ্যালে রহিমুল্লার বাড়ি আক্রমণ করে। যদিও রহিমুল্লাহ আগেই আশঙ্কা করেছিলেন যে ওনার বাড়ি আক্রমণ হতে পারে। তাই তিনি আগ্নেয়াস্ত্র, বন্দুক মজুত করে রেখেছিলেন আগের থেকে। সেই রাতেই রহিমুল্লাহ এবং একদল নীলবিপ্লবী বন্দুক নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। প্রায় সারা রাত ইংরেজদের সাথে গুলির লড়াই চলে। উভয়পক্ষ মিলিয়ে ১৭ জন মারা যায়। রহিমুল্লাও ইংরেজদের গুলিতে শহীদ হন।
রহিমুল্লার মৃত্যুর পর হ্যালের গুন্ডারা রহিমুল্লার ও তাঁর সহযোদ্ধাদের দেহ জঙ্গলে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং মহিলাদের ওপরেও নির্যাতন করা হয়।
এ ঘটনার সময় খুলনা সাব-ডিভিসনের ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি এ ঘটনার পর নিজে মোড়েলগঞ্জে উপস্থিত হন এবং এ ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় তিনি ডেনিস হ্যালেকে দায়ী করে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট দেন ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে। হ্যালে বাঁচার জন্য বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে এক লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন। যদিও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঘুষ না নিয়ে হ্যালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ও অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি করেন।
এই মামলাটি যশোর কোর্টে প্রায় ১৫ বছর চলেছিল। এই মামলায় একজনের ফাঁসি সহ ৩৪ জনকে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। যদিও হ্যালেকে কেউ চিহ্নিত না করতে পারায় বেঁচে যায়।
দুর্ভাগ্যের বিষয় যে আমরা নীলবিপ্লবী শাহীদ রহিমুল্লাহকছ কেউ চিনিনা। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এই মামলাটির ব্যাপারেও কতজন জানেন সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে। বাঙালির হৃত গৌরব ফেরাতে এই সমস্ত মানুষের ইতিহাস আলোচনা করা আবশ্যক। বাঙালির উচিত ইতিহাস বিস্মৃত না হয়ে ইতিহাস সচেতন জাতিতে পরিণত হবার চেষ্টা করা। কারণ যে জাতি তার ইতিহাস ভুলে যায় সে জাতির দুর্দিন ততটাই সহজে আসে।
প্রতিবেদন- অমিত দে
Post a Comment