"সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে প্রচণ্ড পজিটিভ স্পিরিট ছিল"- স্মৃতিচারণায় ইমন সেন
এ লগনে আর কোনোদিনই সশরীরে গান শোনাবেন না তিনি৷ না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন 'গীতশ্রী' সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বাংলা সঙ্গীত জগতের কিংবদন্তি ছিলেন তিনি৷ গানে গানে আট থেকে আশি সব বয়সের মানুষের হৃদয় জয় করেছেন তিনি৷ বাংলার সঙ্গীত আকাশ যেন আজ অভিভাবিকা হীন। তাঁর প্রয়াণে বাঙালির উঠোনের সন্ধ্যা প্রদীপটা যেন দপ করে নিভে গেল। বাংলার সঙ্গীত জগত এখন শোকস্তব্ধ। তাঁকে নিয়ে নানাভাবে স্মৃতিচারণ করছেন বাংলার শিল্পীসমাজের পরিচিত তারকারা।
জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ইমন সেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে আবেগতাড়িত হয়ে তাঁর প্রসঙ্গে অনেক কথা আমাদের জানালেন। ইমন সেন বললেন, "সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের যে বিষয়টি আমার সবথেকে ভালো লেগেছে তা হলো বাংলাকে তিনি প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। ১৯৫০ সালে তিনি মুম্বাইতে গিয়ে লতা মঙ্গেশকরের সাথে একটি ডুয়েটে গান গাইলেন। সেটিই তাঁর গাওয়া প্রথম হিন্দি গান। মুম্বাইতে তাঁর অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। তারপর হঠাৎ করেই তিনি কলকাতা ফিরে এলেন। যে কারণে পরবর্তীকালে অনেকের মনে হয়েছে মুম্বাইতে শত্রুতা বা তাঁর নিজের কোনো সমস্যা হয়েছে বলেই হয়তো তিনি মুম্বাই ছেড়ে কলকাতা চলে এলেন। যদিও এটা ভুল ধারণা। তিনি নিজের মুখে অনেকবার স্বীকার করেছেন যে নিজের মাতৃভাষা বাংলায় গান করে যে আনন্দটা পাওয়া যায় তা আর অন্য কোনো ভাষাতে পাওয়া যায় না। সেজন্য তিনি আর কখনোই কোনো হিন্দি গান করেননি সেভাবে। এই বিষয়টা আমি যখন জানতে পারি তখন নিজের সঙ্গে খুব রিলেট করতে পেরেছিলাম। আমি নিজেও মুম্বাইতে বহুবার বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করার ডাক পেয়েছি। আমি সততার সাথেই বলছি আমার না কোনোদিনই সেখানে গিয়ে থাকতে ইচ্ছে করেনি।
ভবিষ্যতে কোনোদিন হয়তো মুম্বাইতে গিয়ে বলিউডে গানই গাইলাম কিন্তু আমাকে থাকতে হবে এখানেই, গাইতে হবে এখানেই কারণ এটাই আমার মূল জায়গা৷ ঠিক এখানটাতেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সাথে নিজেকে কোথাও গিয়ে কানেক্ট করতে পারলাম। ওনার কণ্ঠ নিয়ে তো নতুন করে বলার কিছু নেই। ওনার কণ্ঠ এক মধুর কণ্ঠ। সবথেকে ভালো লাগতো তিনি এতো বছর বয়সে গিয়েও কত মানুষের সাথে যোগাযোগ করতেন। কত মানুষকে ফোন করে তিনি কথা বলতেন। এতো বছর বয়সেও তিনি হোয়াটস অ্যাপে অ্যাক্টিভ ছিলেন। এগুলোই প্রমাণ করে যে একজন শিল্পীর মধ্যে ভীষণ একটা পজিটিভ স্পিরিট থাকে। তাই শিল্পীদের ঠিক দেবদেবীই বলা যায়।
আমার ওনার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে খুব তাড়াতাড়ি তিনি আবার জন্ম নেবেন৷ আবার পৃথিবীতে তিনি আসবেন৷ আবার কোনো না কোনো রূপে দেশ-বিদেশের যে-কোনো প্রান্তে তিনি জন্ম নিতে পারেন। তাঁর সুর ও কণ্ঠ কোনোদিনই শেষ হবে না।"
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment