লাইভে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য গায়ক শানকে নিয়ে, প্রতিবাদে সরব হলেন ইমন সেন
সঙ্গীত জগতের অতি পরিচিত নাম হলো শান। বাংলা সহ একাধিক ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। তাঁর সুরেলা কণ্ঠ মুগ্ধ করেছে আট থেকে আশি সব বয়সের শ্রোতাদের। গানে গানে তিনি ভরিয়েছেন কোটি কোটি শ্রোতাদের মন। সম্প্রতি তিনি নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল থেকে একটি লাইভ করছিলেন। যেখানে কিছু নিম্নরুচির মানুষ শানকে নিয়ে নানান কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে থাকে। যা দেখে তিনি প্রথমে ভদ্রভাবে বলেন- "গালি দিও না৷ এটা নিজেদের আসল রং তুলে ধরে।" তারপরও কয়েকজন শানের নামে অশ্রাব্য গালাগালি লিখতে থাকে কমেন্টে। কেউ কেউ আবার 'লুঙ্গি ড্যান্স করো' এরকম অশালীন মন্তব্যও করেছেন।
আজকাল গোটা দেশজুড়ে যে মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চলছে তার জলজ্যান্ত প্রমাণ দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। বহু মহান মানুষ থেকে সেলিব্রিটি সকলকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচণ্ড ট্রোলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। একজন তারকা ভুল কাজ করলেও যেমন তাঁকে নিয়ে ট্রোল করা হচ্ছে, আবার তিনি ভালো কাজ করলেও সেটা নিয়ে ট্রোল হচ্ছে। এর ফলে সমাজে এক অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। নিজের অনুরাগীদের প্রতি বেশিরভাগ তারকাদের বিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ মন্দ কাজ করলে মানুষ সেটার প্রতিবাদ করুক ঠিক আছে কিন্তু কেউ ভালো কাজ করলে সেটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাকে নির্বুদ্ধিতা বলে।
শানের লাইভ ভিডিও-র টুকরো টুকরো অংশ কেটে একটি ভিডিও বানিয়ে শেয়ার করেছেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ইমন সেন। শানের সঙ্গে এহেন আচরণের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি৷ ইমন সেন ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, "মানুষ অখাদ্য কুরুচিকর কিছু জিনিস দেখতে দেখতে ভুলেই গেছে- প্রকৃত শিল্পী কারা! এক লক্ষ এরকম শ্রোতার চেয়ে একজন প্রকৃত শ্রোতা অনেক বেশি প্রিয়।"
শানকে নিয়ে যারা অশ্রাব্যভাবে ট্রোল করেছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শানের পাশে দাঁড়িয়েছেন ইমন সেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লিটারেসি প্যারাডাইসকে জানান- "বিগত পাঁচ বছরে, ভারতবর্ষের রুচিবোধের যে নিম্নমুখী যাত্রা তা বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে সুস্পষ্ট। অবাধ ইন্টারনেট এবং হাতে ফোন নিয়ে ঘরের অন্দর মহল থেকে খাদ্য চর্চা ধ্বংস করে দিচ্ছে নতুন কে জানার কৌতুহল ও নিজস্বতা। একটা সময় খাদ্য সংক্রান্ত তথ্যের জন্য সামান্য তথ্যই যথেষ্ট ছিল, বাকিটা নিজে আবিষ্কার করো, এই মনোভাব ছিল। কেউ একজন বাড়িতে বসে ভাত খাচ্ছে মানুষ সেটা দেখছে। এই ধরণের কাজকর্ম মানুষ দেখছে অথচ সুন্দর গান শোনেনা। নতুন ছায়াছবি দেখার ধৈর্যও নেই। যে যে কারণ গুলির জন্য বাংলা সমগ্র পৃথিবীর বুকে মুখ তুলে তাকিয়ে ছিল। আজ তারা এতটাই অবহেলিত যে আমার বোঝানোর ভাষা নেই। বুকের ভিতর টা হাহা করে ওঠে। বাংলার ঋতু ও প্রকৃতি সবসময়ই পৃথিবীকে উন্নত প্রাণ দান করে এসেছে। সেই বাংলাকে উদ্ভাসিত না করলে আর মন ঋষিরা আসবে কোন পথ দিয়ে?
বরং পূর্ব বঙ্গ অনেক অংশে একটা রুচিশীল পরিবেশ কে শক্ত করে যত্নে রেখেছে। যার প্রশংসা না করলে অন্যায় হবে। তাদের মধ্যে একদল মানুষ খুবই উৎসাহের সঙ্গে বাংলার গৌরব কে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে এবং সৃজন শিল্প পশ্চিম বাংলার তুলনায় সেখানে অনেক বেশি গুরুত্ব পায় সচেতনতার স্বভাবে। পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে মানুষের রুচি বোধ এতটাই নেমেছে যে বিকৃত মনুষত্ব নিয়ে যে মহান রবি ঠাকুর কে আঘাত করে তারও নাকি বলার অনেক কিছুই আছে। তার দর্শন নাকি ভাবার মতন। সেও চর্চিত এবং এই ধরণের চর্চাই বাংলা কে নিম্ন মুখী করছে এবং করবে। অতি শীঘ্রই যদি কোনো ব্যবস্থা এগুলোর বিরুদ্ধে না নেওয়া হয় তবে ওই বিকৃত শিক্ষাই বাংলার গৌরব কে অন্তিম পর্যায়ে নিয়ে যাবে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। একটা বিদ্যুতের ঝলক চাই। নবযুগ চাই।"
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment