Header Ads

এশিয়ার প্রথম ক্যাফে কলকাতায়, যা পরিচালনা করছে এইচআইভি আক্রান্তরা


এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের সমাজে এক অন্য চোখে দেখা হয়। কোনো ব্যক্তি এইআইভি পজিটিভ থাকলে তাকে সকলেই সমাজ থেকে দূরে ঠেলে দেন। এইচআইভি যে ছোঁয়াচে রোগ নয় এ কথাটা দৈনন্দিন জীবনে আমরা ভুলে যাই৷ এইচআইভি রোগীরাও আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই বেঁচে থাকতে চান৷ এইচআইভি আক্রান্তরাও কীভাবে স্বচ্ছন্দে জীবনযাপন করতে পারেন একবুক স্বপ্ন নিয়ে তারই পথ দেখাচ্ছে কলকাতা। এশিয়ার মধ্যে কলকাতার বুকেই প্রথমবার একদল এইচআইভি পজিটিভ যুবক-যুবতীরা খুলেছেন ক্যাফে। 


২০১৮ সালে দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্কে তৈরি হয় এশিয়ার প্রথম এইচআইভি পজিটিভ যুবক-যুবতী দ্বারা পরিচালিত ক্যাফে। এখানে আঠারো বছর উর্ধ্ব এইচআইভি আক্রান্ত কয়েকজন তরুণ-তরুণীরা কাজ করছেন৷ যে ক্যাফেটির নামকরণ করা হয়েছে 'ক্যাফে পজিটিভ'। গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সেই ক্যাফের ছবি৷ মানুষজনও ধীরে ধীরে ভিড় জমাচ্ছেন এখানে৷ যা সমাজকে নতুন এক বার্তা দিচ্ছে।

ক্যাফে পজিটিভের উদ্যোক্তা হলেন কল্লোল ঘোষ। তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন কর্মী৷ তাঁর হাত ধরে দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্কে 'ক্যাফে পজিটিভ'-এর যাত্রা শুরু হলেও, বর্তমান ঠিকানা লেক ভিউ রোডে৷ কেন এই ক্যাফের নাম ক্যাফে পজিটিভ? কারণ ক্যাফের কর্মীদের প্রত্যেকেই নিজের শরীরে এইচআইভি মারণ ভাইরাস বহন করছেন জন্মসূত্রে।

কল্লোল ঘোষের নিজস্ব একটি সংগঠন রয়েছে, যারা নিয়মিত শিশুদের নানান অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করছেন৷ ২০০০ সালে নরেন্দ্রপুরের কাছে গোবিন্দপুর গ্রামে তাঁর উদ্যোগে তৈরি হয় 'আনন্দঘর' হোম৷ যেখানে এইচআইভি আক্রান্ত অনাথ বাচ্চারা দিনযাপন করে। সিডব্লিউসি-র অনুমতিক্রমে তাদের হোমে রাখা শুরু হয়। এখানেই তারা একটু একটু করে বড়ো হতে থাকে।  

কল্লোল ঘোষের ক্যাফে পজিটিভের ভাবনাটি আসে জার্মানির মিউনিখ থেকে। ২০০৬ সালে তিনি ব্যক্তিগত কাজে জার্মানির মিউনিখ শহরে গিয়েছিলেন৷ তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন ওখানকার এইচআইভি আক্রান্ত মানুষরা একটা রেস্টুরেন্ট চালাচ্ছেন। ঠিক এখান থেকেই ক্যাফে পজিটিভের ব্যাপারটা মাথায় আসে তাঁর। আইন অনুযায়ী যেহেতু ছেলেমেয়েদের ১৮ বছর বয়স পেরিয়ে গেলে তাকে আর হোমে রাখা যাবে না সেহেতু তাদের বড় হলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তাই তিনি ঠিক করেন আনন্দঘর হোমে আসা প্রথম বাচ্চারা যখন বড়ো হবে তখন তাদের জন্য তিনি একটি ক্যাফেটেরিয়া খুলে দেবেন৷ 

ক্যাফে পজিটিভের যাত্রাপথ ছিল প্রচণ্ড কঠিন। ক্যাফে তৈরির জায়গা না পেয়ে একাধিকবার পিছিয়ে আসতে হয়েছে কল্লোল ঘোষকে। লেক গার্ডেন্স, ডোভার লেন ও বিজন সেতুর মতো বেশ কিছু জায়গায় সাহায্যের আশ্বাস না পেয়েই সময় গড়িয়েছে। তারপর ২০১৮ সালের জুনের শুরুতে তাঁর এক বন্ধুর গ্যারেজটাই সাজিয়ে নেওয়া হয় ক্যাফের মতো করে। তবে মাস কয়েকের মধ্যেই ইতিবাচক সাড়া মিলতে থাকে বিভিন্ন মহল থেকে। আজকাল অনেক নামীদামী ক্যাফেই তাঁকেপ্রস্তাব দিচ্ছেন, প্রয়োজনে কাজ শিখিয়ে হোমের ছেলেমেয়েদের নিজেদের ক্যাফেতে কাজও দিতে চান তাঁরা।   

আজকে বছর চার পরে ক্যাফে পজিটিভ পথ দেখাচ্ছে  বিশ্বকে। তিলোত্তমা কলকাতা  যে বারংবার বিশ্বকে পথ দেখায় তা আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে ক্যাফে পজিটিভের মাধ্যমে। এখন বাংলার সাধারণ মানুষ থেকে তারকারা সকলেই ক্যাফে পজিটিভে নিয়মিত আড্ডা দিতে আসছেন।   

প্রতিবেদন- সুমিত দে


1 comment: