দীর্ঘ ভাষা আন্দোলনের জের, ঝাড়খণ্ডের ১১ টি জেলায় বাংলাকে স্থানীয় ভাষার স্বীকৃতি
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে বাংলা ভাষার জয়জয়কার। প্রবল ভাষা আন্দোলনের জেরে শেষমেশ ঝাড়খণ্ডের মোট ২৬ টি জেলার মধ্যে ১১ টি জেলায় বাংলা ভাষাকে স্থানীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিল ঝাড়খণ্ড সরকার। যে ১১ টি জেলায় বাংলা ভাষাকে স্থানীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে সেগুলি হল পূর্ব সিংভূম, রাঁচি, জামতাড়া, সরাইকেলা, পাকুড়, সাহেবগঞ্জ, বোকারো, ধানবাদ, দেওঘর, দুমকা ও গোড্ডা। একইসঙ্গে ঝাড়খণ্ড সরকার বোকারো ও ধানবাদ জেলার স্থানীয় ভাষার তালিকা থেকে ভোজপুরী ও মাগাহিকে বাদ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঝাড়খণ্ড সরকারের তরফে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঝাড়খণ্ডের ১১ টি জেলায় বাংলাকে স্থানীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে৷ সেখানে বোকারো ও ধানবাদ জেলা থেকে ভোজপুরী ও মাগাহি ভাষাকে সরিয়ে ফেলার কথাও উল্লেখ আছে৷ তবে এই দুই জেলার স্থানীয় ভাষা হিসেবে নাগপুরি, উর্দু, কুড়মালি, কোরথা ছাড়াও বাংলাকে রাখা হয়েছে।
কয়েকমাস আগে বোকারো ও ধানবাদ জেলায় স্থানীয় ভাষা হিসেবে ভোজপুরী ও মাগাহিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঝাড়খণ্ডের হাজার হাজার মানুষ আন্দোলন নামেন। বোকারো ও ধানবাদে আন্দোলন বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের আকার ধারণ করে। যে আন্দোলনে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়ারও জোরালো দাবি ওঠে। প্রায় ৫০ দিন ধরে এই আন্দোলন পরিচালনা করছিল ঝাড়খণ্ডি ভাষা সংগ্রাম সমিতি। অবশেষে জয় হলো এই গণ-আন্দোলনের।
ঝাড়খণ্ডি ভাষা সংগ্রাম সমিতি হলো মূলনিবাসী এবং আদিবাসীদের একটি সংগঠন, যারা নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন বলে দাবি করে থাকে। গত ডিসেম্বরে ঝাড়খণ্ড সরকার মাধ্যমিক ও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভোজপুরী, মাগাহি ও অঙ্গিকাকে যুক্ত করেছিল। সেই সময় বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে রাঁচি ও গিরিডি জেলাতেও৷ তবে বিতর্ক ১৯৩২ সালকে আবাসিক নীতির জন্য কাট অফ ডেট করা নিয়ে।
পরবর্তী সময়ে ঝাড়খণ্ডের আগের সরকার আবাসিক নীতি শিথিল করেছিলেন৷ সেই বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছিলেন ধানবাদ ও বোকারো জেলায় ভোজপুরী ও মাগাহি ভাষাভাষী লোকের সংখ্যা খুবই কম। এই দুই জেলায় বাঙালি, মূলনিবাসী ও আদিবাসীদের সংখ্যাই বেশি। ফলে সরকারি নির্দেশিকায় তাঁদের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ ১৯৬১ সাল থেকে সেখানে হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভোজপুরী ও মাগাহি হলো হিন্দি ভাষার অংশ। ঝাড়খণ্ডে হিন্দি ভাষার স্বীকৃতি একটি স্পর্শকাতর বিষয় হিসেবেই দেখা হয়।
দীর্ঘ ভাষা আন্দোলনের জেরে ঝাড়খণ্ডের ১১ টি জেলায় বাংলা ভাষাকে স্থানীয় ভাষার স্বীকৃতি পাওয়ার ঘটনা আগামীদিনে ঝাড়খণ্ডে বাংলা ভাষার প্রসারকে বিকশিত করবে৷
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment