শিরদাঁড়া সোজা রেখে 'পদ্মশ্রী' প্রত্যাখ্যান করলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
"গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু", "কী মিষ্টি দেখো মিষ্টি", "এই পথ যদি না শেষ হয়", "মধুমালতি ডাকে আয়" আরো কত কত কালজয়ী গান রয়েছে তাঁর সুমিষ্ট কণ্ঠে। তিনি গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বাংলার কিংবদন্তি সঙ্গীত প্রতিভাদের কথা বললেই ভেসে আসে তাঁর নাম। বাংলার তথাকথিত স্বর্ণযুগ যাদের হাত ধরে এসেছিল তিনিও তার মধ্যে একজন। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মূল্যায়ন করা বেশ কঠিন। উত্তম-সুচিত্রা জুটির ছবিতে সুচিত্রা সেনের লিপে তাঁর গান ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম শুনে এসেছে তাঁর গাওয়া গান৷ তাঁকে ছায়াছবি ও আধুনিক গানের সম্রাজ্ঞীও বলা চলে।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বয়স বর্তমানে ৯০ বছর৷ জীবনে যা যা স্বপ্ন ছিল তাঁর সবই পূরণ হয়েছে। তিনি এখন জীবনের প্রায় শেষ লগ্নে এসে দাঁড়িয়েছেন। এই বয়সেও নিজের শিরদাঁড়া সোজা রেখেছেন তিনি৷ সহজ ভাবে বলতে গেলে তিনি শিরদাঁড়াযুক্ত বাঙালি। অন্যায়ের কাছে তিনি আজ পর্যন্ত কখনো মাথা নত করেননি৷ সম্প্রতি তিনি যা করে দেখালেন তাতে গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে প্রতিটি সচেতন বাঙালির। তিনি অদম্য বীরত্বের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করলেন 'পদ্মশ্রী' পুরস্কার।
গতবছর নভেম্বরে ঘোষিত হয় পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপকদের একটি তালিকা। ২৬ শে জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসের মঞ্চে ঘোষিত হবে সেই সকল ব্যক্তিত্বদের নাম। অনুষ্ঠান শুরুর ২৪ ঘন্টা আগে পদ্মশ্রী প্রাপক তালিকায় নতুন নাম সংযোজন করে কেন্দ্র সরকার। সেই নতুন সংযোজিত নামটি ছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ২৪ শে জানুয়ারি সন্ধ্যায় তাঁকে ফোন করে ঘটনাটি জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রালয়ের এক আমলা। তারপরই সরাসরি পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে দেন তিনি৷
ফোনে যেভাবে পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে একজন শিল্পীর কাছে, সেটা তাঁর কাছে যথেষ্ট অপমানজনক ঠেকেছে বলেই তিনি জানিয়েছেন। সাধারণ মানুষও প্রশ্ন তুলছেন যে এমন একজন কিংবদন্তি শিল্পীকে এই ভঙ্গিতে পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রদান আদৌ কী যুক্তিসঙ্গত?
বার্ধক্যজনিত কারণে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় প্রচণ্ড অসুস্থ। এহেন অবস্থায় সোমবার সন্ধ্যায় তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রালয়ের একজন আমলা ফোন করেন৷ ফোনের ওপ্রান্ত থেকে গায়িকাকে হিন্দিতে বলা হয়, "আগামীকাল আপনাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করতে চাই৷ আপনি যদি নেন, তাহলে তালিকায় অন্যান্য পদ্ম-পুরস্কার প্রাপকদের সঙ্গে আপনার নামও ঢুকিয়ে দেওয়া হবে৷" এরূপ কথা শুনেই গায়িকা হতবাক হয়ে যান।
গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, "আমার পদ্মশ্রীর কোনো দরকার নেই৷ শ্রোতারাই আমার সব।" আচমকা এই পদ্মশ্রী খেতাবের ফোনে তিনি যে অসম্মান বোধ করেছেন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক কিংবা বেসিক গানের অ্যালবাম, তাঁর কাজের ব্যাপ্তি অনেকটাই। তা না জেনে কেউ তাঁকে সম্মান দিতে চাইলে তা তিনি গ্রহণ করবেন না, সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন তিনি৷
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আটের দশকে ঠিক একইভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দেওয়া পদ্মশ্রী সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বাংলা সঙ্গীত জগতের আরেক নক্ষত্র হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তার প্রায় তিন দশকের মাথায় সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে ২০২২ সালের ২৪ শে জানুয়ারি একই কাজ করলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment