বসিরহাটের রাজনীতিতে এখন একটাই মিথ সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়
১৬ ই আগস্ট রাজ্য সরকারের খেলা হবে দিবস সফল করতে অন্যান্যদের মতো করোনা বিধি মেনে তিনিও জার্সি পরে ফুটবল নিয়ে নেমে পড়েছিলেন বসিরহাটের খোলাপোতার নবজাগরণি সংঘের ফুটবল মাঠে, খেলার পর পার্টি অফিসে সবে মাত্র বসেছেন কয়েক মিনিট, তখন এসেছিল সেই সুখবর, তৃণমূল কংগ্রেসের বসিরহাট (সাংগঠনিক) জেলার সভাপতি হয়েছেন সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়৷
কর্মী, সমর্থক থেকে সাধারণ মানুষের কানে প্রিয় সরোজদা জেলা সভাপতি হয়েছেন খবরটা পৌঁছে যেতে যেটুকু সময় লাগে শুধু সেটুকু সময় লেগেছিল তারপর মুহূর্তে বদলে গিয়েছিল চারিদিকের পরিবেশ, আনন্দে, উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলেন দলীয় কর্মী সমর্থক থেকে বসিরহাটের আবালবৃদ্ধ বনিতা৷ সেই আনন্দে ছিল সবার আবেগের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ৷ মিষ্টিমুখ চলছে, কর্মী, সমর্থকরা একে অপর কে মিষ্টিমুখ করিয়ে ছিলেন, রাত বেড়েছে, তত বেড়েছে মানুষের ঢল যেখানে সরোজ বাবু বসে ছিলেন৷ রাত এগারোটায় সময়েও দলীয় কার্যালয়ে তিল ধারণের জায়গা নেই, বাইরে শত-শত মানুষ অপেক্ষায়, কেউ প্রিয় সরোজদার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন, কেউ করমর্দন করলেন, কেউ আলিঙ্গন৷
সত্যের বোধহয় একটুও অপলাপ হয়না, বসিরহাটের রাজনীতিতে সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ মিথ, একটা মহীরুহ৷ মুখে সর্বদা স্নিগ্ধ হাসি, সবার সঙ্গে কথা বলেন হাসিমুখে৷ জনসংযোগ আজ নয় যখন তিনি রাজনীতিতে এসেছেন সেদিন থেকেই তাঁর বড় হাতিয়ার৷ অকাতরে ব্যক্তিগত দান-ধ্যান করেন নীরবে, নিঃশব্দে, জাত-ধর্ম-বর্ণ রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে মানুষের স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শ কে পাথেয় করে মানুষের জন্য কাজ করেছেন রাজনৈতিক মঞ্চে পদার্পণের দিন থেকেই৷
মানুষের স্বার্থে, দলের স্বার্থে নিঃশব্দে ব্যয় করেন নিজের পকেটের টাকা, সেইজন্য সাধারণ মানুষ থেকে দলীয় কর্মী সমর্থক অথবা তৃণমূলের সমর্থক নন বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীরা স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে বলেন- 'সরোজদা আমাদের মানুষ, যোগ্য নেতা, আমাদের সুখ-দুঃখের সাথী'৷ অথচ মানুষটা বরাবরের জন্য প্রচার বিমুখ, বোধহয় সেটাই সরোজ বাবুর রাজনীতির সব থেকে বড় ইউএসপি৷ তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকে দলের সাথে আছেন, দলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আনুগত্য, শ্রদ্ধা আর হৃদয়ের অকৃত্রিম ভালবাসা ঝরে পড়ে প্রতিটি কথার ছত্রে-ছত্রে৷ তৃণমূলের সেকেন্ড ম্যান ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তিনি একই রকম শ্রদ্ধাশীল।
তৃণমূল কংগ্রেসের বসিরহাট জেলার সাংগঠনিক সভাপতি হওয়ার পর সরোজ বাবুর দায়িত্ব যেমন বেড়েছে, তেমন ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ৷ সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে চরকির মতো ঘুরছেন মহকুমার সর্বত্র৷ কখনও হাসনাবাদ, কখনও হিঙ্গলগঞ্জ, কখনও সন্দেশখালি অথবা হাড়োয়া৷ দলীয় নেতা-কর্মী, বিধায়কদের সঙ্গে দলের সাংগঠনিক উন্নতির জন্য মিটিং করেন, বসিরহাটের যে প্রান্তে তিনি যান সেখানেই দলীয় কর্মী-সমর্থকরা সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় কে হৃদয় ভরা আবেগ দিয়ে উষ্ণ শুভেচ্ছায় সাদরে স্বাগত জানাতে এগিয়ে আসেন, একটানা মিটিং করে শারীরিক ক্লান্তি হয়তো এসেছে! কিন্তু মুখের হাসি মিলিয়ে যায় না কোনও সময়৷
বিভিন্ন ব্লকের দলীয় কার্যালয়ে যখন গিয়েছেন প্রবীণ কর্মীদের সাথে এক রকম আবার তরুন কর্মীদের সঙ্গে আরেক রকম আলাপচারিতা তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে দলের নেতা, কর্মী সমর্থক সহ সাধারণ মানুষের কাছাকাছি৷
জীবনের অঙ্কে ষাটের বসন্তে পদার্পণ করা সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, বানিজ্যে স্নাতক৷ বাবা বসিরহাটের ঐতিহ্যবাহী রঘুনাথপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, দাদা ভাইদের মধ্যে চারজন আমেরিকায় দীর্ঘদিন উচ্চপদে চাকরি করেন, অন্যান্য দাদা-ভাইয়েরা দেশে উচ্চপদস্ত সরকারি আধিকারিক ছিলেন৷
নিজে সরকারি চাকরি পেয়েও হেলায় উড়িয়েছেন সেই সুযোগ, শুধুমাত্র রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের কাজ করার অভিপ্রায়ে৷ চুটিয়ে ফুটবল খেলেছেন বসিরহাট মহকুমা ও কলকাতা লিগের প্রথম ডিভিশনে, ফুটবল বিশেষজ্ঞরা তাঁর খেলার উচ্চ প্রশংসা করতেন৷ স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষটার একমাত্র নেশা দিনে কয়েক কাপ চা, তবে অন্য একটি নেশা তাঁর আছে প্রতিদিন খোলাপোতা বাজারে এসে নিজের হাতে বাড়ির বাজার করা৷ তারপর আবার দলীয় কার্যালয়ে বসে কর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতা, দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য নেতা-কর্মীদের সাথে বৈঠক, তাদের প্রস্তাব মন দিয়ে শোনা৷ অবশ্য এই রুটিন ব্যতিক্রম হয় যেদিন তাঁকে দলের কাজে বসিরহাট মহকুমার কোনও প্রান্ত অথবা কলকাতায় যেতে হয়৷ একবার মাত্র নির্বাচনে লড়েছিলেন ২০০৮ সালে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে জিতেছিলেন, ২০১৯ সালে অবশ্য লোকসভা নির্বাচনে দলের নির্দেশে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীর চিফ ইলেকশন এজেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষতার সঙ্গে৷
জেলা সভাপতি হওয়ার খবর আসার দিন অনেক কর্মী, সমর্থক বলছিলেন দাদার ব্যস্ততা বাড়বে, আমরা কি আর সেভাবে দাদা কে পাব! সংশয়ের দোলাচলে থাকা কর্মীদের আশ্বস্ত করে তিনি বললেন সরোজদা প্রথম যেদিন রাজনীতি করতে এসেছিল সেদিন যেমন ছিল, সভাপতি হওয়ার পর ঠিক তেমন থাকবে, দল যে গুরু দায়িত্ব দিয়েছে সবাইকে নিয়ে সেই দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালনের জন্য তিনি সবার সহযোগিতা আর আর্শীর্বাদ তিনি চান৷
সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সভাপতি হওয়ার পর কেটেছে বেশ কয়েক মাস, আজ তিনি সত্যিই বসিরহাট মহকুমার রাজনীতিতে মিথ, জাত-ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সব মানুষের নয়নের মণি৷ সবাই একবাক্যে বলেন সরোজ ব্যানার্জির মত মানুষ আজকের রাজনীতিতে বিরল, সেসব কথা নিজের কানে গেলে বলেন মানুষের পাশে সারাজীবন থাকতে চাই। বসিরহাটের সাধারণ মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজের দায়িত্ব সুষ্ঠু ভাবে পালন করতে চাই৷ বলা বাহুল্য সেই কাজটা তিনি মাত্র কয়েক মাসে করেছেন অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক দক্ষতায়।
প্রতিবেদন-অরুণাভ সেন
Post a Comment