পড়ুয়াদের গবেষণামুখী করার স্বীকৃতি, প্রথম ভারতীয় হিসেবে হল অফ ফ্রেমে ভূষিত অর্পিতা সাহা
জর্জিয়া সার্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় অধ্যাপিকা হিসেবে 'ফেল্টন জেনকিনস জুনিয়র হল অফ ফ্রেম' পুরস্কারে সম্মানিত হলেন অর্পিতা সাহা। পড়ুয়াদের গবেষণামুখী করার স্বীকৃত স্বরূপ এই সম্মান অর্জন করলেন তিনি। যে সম্মানের জন্য ইউনিভার্সিটি সিস্টেম অফ জর্জিয়ার এগজিকিউটিভ ভাইস চ্যান্সেলর ট্রিস্টান ডেনলে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
ট্রিস্টান ডেনলে বাঙালি অধ্যাপিকা অর্পিতা সাহার এই সম্মান লাভের প্রসঙ্গে বলেন, "করোনা মহামারীর সময়ে আমাদের সকলের জীবনই প্রায় থমকে গিয়েছিল। তার মধ্যেও অর্পিতা ক্রমাগত তাঁর ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে গবেষণার জন্য তাঁদের উৎসাহ দিয়ে গেছেন। সেই পরিশ্রমেরই সাফল্য হলো এই সম্মান।"
ছোটোবেলা থেকেই বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন অর্পিতা সাহা। স্কুলের পরীক্ষায় ভূরি ভূরি নম্বর পেতেন তিনি৷ একজন মেধাবী ছাত্রী হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন সে সবটুকুই তার মধ্যে ছিল। ক্রমশ নিজের মেধার জেরে তিনি মেধাবী ছাত্রী হয়ে ওঠেন। তবে মেধাবী ছাত্রী হয়েও তৃপ্তি মেটেনি তাঁর কারণ নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। কী সেই স্বপ্ন? জানা ছিল না তাঁর। অধরা স্বপ্ন নিয়েই স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে তাঁর কলেজ জীবনের সূচনা হয়।
কলেজে পড়ার সময় থেকেই অধরা স্বপ্ন বাস্তবের মুখ দেখতে শুরু করে দেয়। প্রেসিডেন্সি কলেজে স্নাতক হওয়ার পর স্নাতকোত্তরের সুযোগ পেলেন তিনি কানপুর আইআইটি থেকে। তারপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর মার্কিনে গবেষণার ডাক পেলেন তিনি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সমাপ্ত করার পর তিনি যোগ দেন জর্জিয়া সার্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজে। যার সূত্র ধরেই নতুন কিছু করার স্বপ্নের সূত্রপাত হলো তাঁর। তিনি স্থির করলেন, পঠনপাঠনের চেনা ছক ভেঙে পড়ুয়াদের বেশি বেশি করে গবেষণামুখী করবেন৷
অধ্যাপনা জীবনের একেবারে গোড়াতেই বদলে দেন পঠনপাঠনের সর্বস্ব চেনা ছক৷ তিনি এককভাবে নিয়ে এলেন 'ইনোভেটিভ টিচিং স্ট্যাটেজি'। তাঁর প্রচেষ্টায় কলেজের প্রথম বর্ষ থেকেই পড়ুয়ারা গবেষণার সুযোগ পাচ্ছে। এমনকি প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য ফ্রেশম্যান রিসার্চ পোগ্রামও শুরু করেছেন তিনি৷ কালের নিয়মে তুমুল জনপ্রিয়তা পেতে থাকে তাঁর আবিষ্কৃত পঠনপাঠনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। যার ফলশ্রুতিতে হল অফ ফ্রেম সম্মানে ভূষিত হলেন তিনি৷ বহু অপেক্ষার পর আজ স্বপ্নপূরণ হলো অর্পিতা সাহার।
কর্মসূত্রে মার্কিনে থাকলেও তিনি ভোলেননি জন্মভূমির শিকড়ের টান। ভবিষ্যতে বাংলার পড়ুয়াদেরও গবেষণার কাজে আগ্রহী করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হলেও বাঙালি অধ্যাপিকা অর্পিতা সাহা জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে কলকাতার পাশাপাশি কল্যাণীর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে কাজ করার কথা ভাবছেন তিনি।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment