Header Ads

শতবর্ষের পথে ঐতিহ্যশালী নৈহাটির বড়মার পুজো


'বড়মা' কথাটি বললেই বেশিরভাগ মানুষের স্মরণে আসে নৈহাটির অরবিন্দ রোড, ধর্মশালা মোড়ের চৌদ্দ হাত কালী মূর্তির কথা। "ধর্ম যার যার, বড়মা সবার" এই বাণীকে পাথেয় করে এবার শতবর্ষের পথে নৈহাটির বড়মার পুজো। প্রত্যেক বছর দীপান্বিতা অমাবস্যার তিথিতে পূজিত হন বড়মা। লক্ষ লক্ষ মানুষ বড়মার টানে ছুটে আসেন নৈহাটিতে৷ এতো বড়ো বিশাল সুউচ্চ কালীমূর্তি খুব কমই দেখা যায়। কেউ এখানে আসেন বড়মাকে দর্শন করতে, কেউ আসেন মনস্কামনা পূরণের পুজো দিতে৷ কেউ বা আবার আসেন মানত করতে। বহু লোকের বিশ্বাস জাগ্রত বড়মা তাদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন। 


ইতিহাসের দলিল থেকে জানা যায়, আজ থেকে ৯৯ বছর আগে নৈহাটির বাসিন্দা জনৈক ভবেশ চক্রবর্তী ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু নবদ্বীপে রাসযাত্রা দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে মস্ত বড়ো বড়ো দেবদেবীর মূর্তি দেখে তাঁরা মনস্থির করেন পরের বছর নৈহাটিতে তাঁরাও এমন বড়ো একটি মাতৃপ্রতিমা কালীর পুজো করবেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। শুরু হলো চৌদ্দ হাতবিশিষ্ট বাইশ ফুট লম্বা কালীমূর্তির পুজো। প্রসঙ্গত বৈষ্ণব মতে দক্ষিণা কালীরূপে পূজিতা হন বড়মা। তাই এই পুজোতে কোনো বলিদান প্রথা নেই। 

লোকমুখে প্রথমে এই পুজো ভবেশ কালী হিসেবেই পরিচিত ছিল৷ পরবর্তীকালে মূর্তিটির উচ্চতার কারণে বড়মা নামেই জনমানসে পরিচিতি লাভ করে। প্রাচীন ঐতিহ্যকে বজায় রেখে আজও পুজোর ভোগ আসে চক্রবর্তী বাড়ি থেকেই। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন হয় কাঠামো পুজো। তারপরই ১৫ দিনের মধ্যে ২১ ফুট লম্বা কালী প্রতিমা তৈরি হয়। ঘন কৃষ্ণবর্ণ প্রতিমা স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিতা। কালী ভক্তদের দান করা অলঙ্কারে সজ্জিত হয় দেবী মূর্তি। দেবীর মুকুট, চাঁদমালা, মল রূপোর। ত্রিনেত্র, জিহ্বা, ভুরু, নাক, গালের চন্দনচর্চা সোনার। এছাড়া টিকলি থেকে শুরু করে সারা গায়ে থাকে রকমারি সোনার গহনা৷  

এই পুজোর বিশেষত্ব হলো ভক্তদের মনস্কামনা পূরণ হলে তাঁরা দেবীকে সোনা-রূপোর অলঙ্কারে ভরিয়ে দেন। ভক্তদের দেওয়া দেড় কোটি টাকার গহনা স্থানীয় একটি ব্যাঙ্কের লকারে বছরভর গচ্ছিত থাকে। পুজোর দিন সেই লকার থেকে গহনা এনে দেবীকে পরানো হয়। এই পুজোতে কোনওরকম চাঁদা নেওয়া হয়না। সদস্যদের আর্থিক সহায়তা ও ভক্তদের অনুদানেই পুজো পেয়ে আসছেন নৈহাটির বড়মা৷ পুজোর রাতে বড়মা-র প্রসাদে থাকে পোলাও, খিঁচুড়ি, পাঁচ রকমের ভাজা, তরকারি, লুচি, চাটনি, পায়েস৷ বিসর্জনের আগের দিন রাতে দেবীকে লাড্ডু ভোগ দেওয়ার প্রথাও অটুট রয়েছে।  

প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে মাকে পরানো হয় ফুলের সাজ। নৈহাটির সমস্ত পুজো শুরু হয় বড়মার পুজো শুরুর পর এবং নিরঞ্জনের ক্ষেত্রেও প্রথমে বড়মার নিরঞ্জন সুসম্পন্ন হওয়ার পর অন্যান্য প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সাঙ্গ করে শতবর্ষে পা রাখছে বড়মার পুজো। বর্তমানে এই পুজোকে ঘিরে বাংলার বেশিরভাগ মানুষের যেন উন্মাদনার শেষ নেই। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments