নচিকেতা অনুরাগী গৌরবের 'চা ও নচিকেতা' এখন পাটুলির জনপ্রিয় চায়ের ঠেক
'বৃদ্ধাশ্রম' থেকে 'পৃথিবী আবার শান্ত হবে', 'এই বেশ ভালো আছি' থেকে 'একলা চলতে হয়'; কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তীর গানে বারবারই উঠে আসে সমাজের কথা এবং জীবনের গল্প। নচিকেতার গানে মুগ্ধ হতে হয় সমস্ত বয়সের মানুষদের৷ নচিকেতা চক্রবর্তীর অনুরাগীর যেন শেষ নেই। অল্প সময়ে অধিক জনপ্রিয়তা নচিকেতার মতো খুব কম শিল্পীই পেয়েছেন। নচিকেতার বড়ো বৈশিষ্ট্য তিনি অত্যন্ত প্রতিবাদী এবং সাহসী গায়ক। তাঁর গান বহু মানুষকে বাঁচার মন্ত্র জাগিয়েছে।
নচিকেতার এক বিশিষ্ট অনুরাগী হলেন গৌরব গুহ। যার জীবনের বেড়ে ওঠাটা রূপকথার গল্পের মতো। নেশার জগতের সঙ্গে জড়িয়ে জীবনের প্রদীপ নিভে যেতে বসেছিল গৌরব গুহর৷ নচিকেতার লড়াকু গানই তাঁকে নতুন করে বাঁচার উৎসাহ দেয়। টানা তিন মাস পুনর্বাসন কেন্দ্রে কাটিয়ে নেশা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন গৌরববাবু৷ ২০০৯ সালে মাদকাসক্তি থেকে তিনি বেরিয়ে আসেন। এরপর চাকরির চেষ্টা করে একটা সময় হাল ছাড় দেন তিনি৷ তাঁকে কাজ দেবে কে? কিছুটা চিন্তায় পড়ে যান তিনি৷ অতঃপর কোনোরকম চিন্তাভাবনা না করে একটা আদ্যোপান্ত চায়ের দোকান খুলে বসলেন তিনি। সারাদিন ধরে নচিকেতার গান শোনা আর চা বিক্রি করে দিব্যি দিন কাটাতে শুরু করলেন তিনি৷ তারপর সদস্য হলেন নচিকেতার ফ্যান ক্লাব 'আগুনপাখি'র। চায়ের দোকান চালানোর ফাঁকে ফাঁকে নচিকেতার কলকাতায় প্রায় সব অনুষ্ঠানে যেতে থাকেন।
দক্ষিণ কলকাতার আড্ডার সংস্কৃতিতে ঝড় তুলতে যাদবপুর এইট বিতে নচিকেতার নামে চায়ের ঠেক বসিয়ে দেন তিনি৷ তার কয়েক মাস পর তিনি পাটুলিতে তৈরি করেছেন নচিকেতার নামে আরেকটি চায়ের ঠেক। দোকানের ভেতর জ্বলজ্বল করতে থাকে নচিকেতার গানের কলি৷ সাথে সাদা-কালো-রঙিন ক্যানভাসে নচিকেতার কয়েকটি ছবি। চায়ের ঠেকের তিনি নাম দিয়েছেন 'চা ও নচিকেতা'। পথচলতি বহু মানুষজন এখন এই চায়ের ঠেকে আড্ডা দিতে আসছেন নিয়ম করে।
পাটুলির 'চা ও নচিকেতা' গৌরববাবুর দ্বিতীয় চায়ের দোকান৷ চা ও আড্ডার জন্য কদিনেই পাটুলির এই চায়ের ঠেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ যাদবপুরের 'চা ও নচিকেতা' নামক চায়ের ঠেক তৈরি হওয়ার খবর নচিকেতার কানে উঠতেই তিনি সশরীরে তার দোকানে এসে উপস্থিত হন৷ তার হাত ধরেই দোকানের উদ্বোধন হয়। সেদিন সারাদিন পথচলতি লোকেদের বিনামূল্যে চা খাওয়ানো হয়। চা তৈরির সম্পূর্ণ খরচ নচিকেতা নিজেই বহন করেন৷
জনপ্রিয়তায় পাটুলির 'চা ও নচিকেতা' যাদবপুরের থেকেও বেশি এগিয়ে। আড্ডাবাজ বাঙালির বর্তমানে অন্যতম আকর্ষণ হলো পাটুলি। একদিকে ঝিলের ওপর হাওড়া ব্রিজের বনসাই, সাউন্ড অফ মিউজিক পার্ক। অন্যদিকে হাইওয়ের উদ্দাম গতি, বিশ্ববাংলা গ্লোব, কৃষাণু দের মূর্তি এবং ভাসমান বাজার। একেবারে আড্ডার মোহময়ী পরিবেশ। কিন্তু এখানে দুটো জিনিসের বড্ড অভাব ছিল চা ও গানের। পাটুলির 'চা ও নচিকেতা'র নতুন দোকান সেই অভাব পূরণ করেছে।
গৌরববাবুর মতে, "দোকানেও নচিদাই আমার সঙ্গী। আগে শুধু তাঁর ছবি টাঙিয়ে রাখতাম আর গান বাজাতাম। এখন গোটা দোকানটাই নচিকেতার নামে উৎসর্গ করে দিয়েছি।" গৌরববাবুর মতো একজন সত্যিকারের অনুরাগীকে পেয়ে নচিকেতা নিজেকে ধন্য মনে করেন৷ পাটুলি ও যাদবপুরে শো করতে এলে প্রথমেই তিনি গৌরববাবুর দোকানে এককাপ চা খেয়ে যান৷ তিনি অনুরাগীদের দুঃখ-সুখে এভাবেই পাশে থাকেন।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment