ইঞ্জিনিয়ারিং-এর চাকরির ঘেরাটোপ ছেড়ে চায়ের ব্যবসাতে মজে দুই বঙ্গ ভ্রাতৃদ্বয়
কেবল পড়াশোনা করে চাকরি করতে হবে এর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পড়াশোনা শেষ করে চাকরির বাইরে অনেক পেশাকেই ভালোবেসে গ্রহণ করা যায়। কারণ জীবনে সাফল্য এবং সুখই সবচেয়ে মূল্যবান বিষয়। জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলে এ জীবন দিশাহীন হয়ে পড়ে। অন্ধকার সরিয়ে আলোর উৎস সন্ধানই হলো বেশিরভাগ মানুষের জীবনের লক্ষ্য। যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কেউ বারবার জেতে, আবার কেউ বারবার হেরে যায়। কিন্তু জীবনপথে হাল ছেড়ে দিলে হবে না। শক্ত হাতে হাল ধরে প্রত্যেক মানুষকে এগিয়ে যেতে হবে।
সুমন কর ও সুমিত কর দুই বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার, যারা ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে মজে আছেন চায়ের ব্যবসাতে। বাণিজ্যে-বসতে লক্ষ্মী, এই প্রবাদটা বাংলার বহুদিনের। বাঙালিকে এই প্রবাদ কখনোই ভুলে গেলে চলবে না। বাঙালির বর্তমান প্রজন্ম এখন বেশি বেশি করে ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে। বাংলার অন্যতম নতুন চায়ের ব্র্যান্ড 'চা-খোর ভেনচার্স'-এর মতো করে তারাও এগোচ্ছেন।
সুমন কর অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা করেছেন। একটা ভালো চাকরির সন্ধানে ভিন রাজ্যে যান তিনি৷ যদিও সেখানে গিয়ে তিনি তেমন চাকরির সুযোগ পাননি৷ ভিন রাজ্য থেকে ঘরে ফিরে তিনি একটি গাড়ির কাজ শুরু করেন৷ তবে খুব বেশিদিন এখানে তিনি কাজ করতে পারলেন না। অল্প রোজগারের জন্য বেজায় বিরক্ত হয়ে এই কাজটা তিনি ছেড়ে দেন। চাকরির মোহে নিজেকে আবদ্ধ না রেখে তিনি ব্যবসা করবেন বলে স্থির করেন। প্রথমে অটোমোবাইলের স্পেয়ার-পার্টসের ব্যবসা করার কথা ভাবেন তিনি৷ কিন্তু টাকার অভাবে তা সম্ভব হয়নি৷ কাজেই স্বল্প ব্যয়ে দুর্গাপুরের জাতীয় সড়কের ধারে হেভি মোড়ের কাছে এবিএল সার্ভিস রোডের ধারে চায়ের দোকান খুলে ফেলেন তিনি।
সুমন করের ভাই সুমিত কর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেও কোনো চাকরি পাননি। তাই শেষমেশ তিনিও সুমন বাবুর সাথে চায়ের ব্যবসাতে মনোনিবেশ করেন। দুই ভাই মিলে দারুণ ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দোকানটিকে। মাসের শেষে মোটা টাকা উপার্জন করে দিব্যি কাটাচ্ছেন তারা। দশ টাকা থেকে কুড়ি টাকা ও তিরিশ টাকা অবধি বাহারি রকমের ভাঁড়ে চা পাওয়া যায় তাদের দোকানে। তারা রকমারি স্বাদের অনেক চা বানান। বহু চা-প্রেমী মানুষজন সকাল-সন্ধ্যা দু'বেলাই তাদের দোকানে আয়েশ করে চা পান করছেন। সারা দুর্গাপুর জুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই চায়ের দোকান।
চায়ের দোকানের ব্যবসার প্রসারের জন্য তারা চায়ের গুনগত মান বা কোয়ালিটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। পাশাপাশি চায়ের পরিমাণের ওপরও জোর দিচ্ছেন। তাদের দোকানের চা এতোটাই সুস্বাদু যে তার স্বাদ গ্রাহকদের চোখে মুখে লেগে থাকছে। বেশিরভাগ মানুষ তাদের বলছেন চায়ের এই স্বাদ যেন তারা সর্বদা বজায় রাখেন। তাদের দোকানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো বিভিন্ন বিস্কুটের সম্ভার। এই দোকানে, চায়ের সঙ্গে নানান স্বাদের বিস্কুট পাওয়া যায়৷ যে বিস্কুটগুলির সাথে চা খাওয়ার আনন্দই আলাদা।
সুমন ও সুমিত বাবু শুধুমাত্র একটি চায়ের দোকানেই সীমাবদ্ধ থাকতে চান না। তারা তাদের চায়ের দোকানকে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে চান৷ ভবিষ্যতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের চায়ের দোকানের শাখা খুলতে চান তারা। আগামীদিনে অনেক মানুষকে তাদের চায়ের দোকানে কাজও দিতে চান তারা৷ প্রখ্যাত মনীষী মিল্টন বারলে বলে গেছেন, "যদি তোমার কোনো চাকরির সুযোগ না আসে তবে অন্যদের চাকরির সুযোগ করে দেয়ার ব্যবস্থা করো।" এনারা দুজনে সেটাই করে দেখাচ্ছেন।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment