শিরোমণি প্যাসেঞ্জার তুলে দেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে জঙ্গলমহল
জঙ্গলমহলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন হল শিরোমণি প্যাসেঞ্জার, যা ছিল দশকের পর দশক ধরে জঙ্গলমহলের লক্ষ লক্ষ মানুষের হাওড়া যাওয়ার প্রথম ট্রেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ কলকাতা থেকে বাজার করে আবার এই ট্রেনেই ফিরে আসতেন। পিয়ারডোবা, বগড়ি রোড, বিষ্ণুপুর, ওন্দা, গড়বেতা, চন্দ্রকোনা রোড, শালবনী, গোদাপিয়াশাল, ভাদুতলা এই সমস্ত রেল স্টেশনে সবচেয়ে ভিড় হতো এই ট্রেনে। রবিবার পর্যন্ত সিট পাওয়া ছিল দুষ্কর। এই ট্রেন ছাড়াও সকালে আরো দুটো ট্রেন দেওয়ার দাবী দীর্ঘদিনের। এই ট্রেনকে অলাভজনক ট্রেন আখ্যা দিয়ে এই ট্রেন বন্ধ করা হল। যদিও এই ট্রেনকে অলাভজনক আখ্যা দেওয়ার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের প্রতি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলেই দেখছেন জঙ্গলমহলের অধিকাংশ মানুষ।
এই ট্রেনের পরেই থাকতো পুরুলিয়া এক্সপ্রেস যে ট্রেনটিতেও প্রচন্ড ভিড় হতো যদিও এটি এক্সপ্রেস ট্রেন হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের প্রথম পছন্দ ছিল শিরোমণি প্যাসেঞ্জার। শিরোমণি প্যাসেঞ্জার না ধরতে পারলে হাওড়া থেকে জঙ্গলমহলে ফেরার কার্যত কোনো ট্রেন-ই নেই সেক্ষেত্রে রাত্রি সাড়ে ১১ টার পর চক্রধরপুর ধরতে হতো। চক্রধরপুরের ক্ষেত্রেও গড়বেতা স্টেশনের স্টপেজ বন্ধ করা হয়েছে যার ফলে জঙ্গলমহলের ব্যবসা বাণিজ্য সংটের মুখে পড়বে বলেই মনে করছেন জনসাধারণ।
মেদিনীপুর হাওড়া লোকাল গুলোকে গড়বেতা পর্যন্ত করার দাবীও রয়েছে কয়েক দশক ধরেই। সেগুলো পূর্ণ তো করাই হয়নি উপরন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলো তুলে দেওয়া হল যার ফলে বিপর্যস্ত জঙ্গলমহলের মানুষ।
কলকাতা যেতে হলে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ করে যেতে হচ্ছে গাড়ি ভাড়া করে। হাওড়া যাওয়ার বাস যেহেতু খুব একটা সচরাচর নয় এই এলাকায় তাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ।
গড়বেতা, শালবনী থেকে শাক-সব্জীও নিয়ে যেতেন ব্যবসায়ীরা যা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে শহরের শাক-সব্জীর দাম-ও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
এলাকার মানুষ একে বাংলার প্রতি বঞ্চনা বলেই মনে করছেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজ সচেতন মানুষের উচিৎ এই নিয়ে প্রতিবাদে সামিল হওয়া। কলকাতায় পড়তে যাওয়া ছাত্রছাত্রীরাও কলেজ খুললে অসুবিধায় পড়বে। তাছাড়া কলকাতায় চিকিৎসার জন্য যাওয়া মানুষের জন্য দুর্দিন ডেকে আনতে পারে এই সিদ্ধান্ত। এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী, বই দোকান, ভূষিমাল এসব দোকানের মালিকরাও মাল করতে যেতেন এই ট্রেনে। বর্তমানে এই সব এলাকা থেকে হাওড়ায় ১২ টার আগে পৌঁছানোর কোনো ট্রেন নেই। মেদিনীপুর শহরেও বহু ছাত্রছাত্রী পড়াশুনার জন্য যায়, অসুবিধায় পড়বেন তারাও। ব্যাঙ্কিং এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলিও কলকাতায় গিয়ে দিতে হিমশিম খেতে হবে ছাত্র-ছাত্রীদের। করোনা পরবর্তী সময়ে এই সিদ্ধান্ত জঙ্গলমহলের প্রতি বঞ্চনা করা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মনে করছেন জনসাধারণ।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment