Header Ads

অবাঙালি ফুচকা সাম্রাজ্যে থাবা বসাচ্ছে দুর্গাপুরের 'বৌদিদের ফুচকা'


'ফুচকা'; এই মুখরোচক পদটিকে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর ব্যাপার। বাঙালিদের প্রিয় মুখরোচকের তালিকায় এখন ফুচকাও স্থান করে নিয়েছে। এই ফুচকা বিক্রি করেই দুর্গাপুর শহরের কয়েকজন মহিলা বাজিমাৎ করছেন৷ গুটি গুটি পায়ে দুর্গাপুর শহরের বিখ্যাত ফুচকা হিসেবে পরিচিত লাভ করছে কয়েকজন বৌদির জিভে জলে আনা 'বৌদিদের ফুচকা'। কলকাতার 'দাদা বৌদির বিরিয়ানি'র মতো দুর্গাপুরের 'বৌদিদের ফুচকা'ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 


দুর্গাপুর শহরে ফুচকা ব্যবসা সাধারণত অবাঙালিদের দখলেই রয়েছে৷ তবে দুর্গাপুরে জনাকয়েক বাঙালি বৌদি অবাঙালি ফুচকা সাম্রাজ্যে থাবা বসিয়েছে৷ বৌদিদের ফুচকা মানেই স্বাদে ভরা লোভনীয় সেরা ফুচকা। সন্ধ্যে হলেই ভিড় জমে যায় দুর্গাপুরের এই বৌদিদের ফুচকা স্টলে। কেউ একদিন সংসারের হাল সামলাতে, কেউ বা স্বামীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংসারের হাল টানতেই শুরু করেছিলেন এই ফুচকা ব্যবসা৷ কেউ ফুচকা তৈরি শেখেন ইউটিউব থেকে। কেউ পেশাদার ফুচকা ব্যবসায়ীর কাছে ফুচকা তৈরি শেখেন৷ জোরকদমে সবরকম প্রশিক্ষণ নিয়েই আরম্ভ হয়েছিল এই ফুচকা ব্যবসা।

সংসারের অনটন কাটাতে সমস্ত প্রকার লোকলজ্জাকে আড়াল করে নিজেদের এলাকায় ভ্যান টেনে ফুচকার স্টল বসিয়ে 'বৌদিদের ফুচকা' ব্যবসা জমিয়ে তুলেছেন মঞ্জু দে, পূর্ণিমা পাল, কবিতা বিশ্বাসের মতো কয়েকজন বাঙালি বৌদিরা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর এক নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুরের বাসিন্দা মঞ্জু দে। তাঁর স্বামী সব্জি বিক্রেতা ছিলেন। তাঁদের একমাত্র কন্যা এক সময় খুব অসুস্থ ছিল। সব্জি বিক্রিতে স্বামীর লোকসান হচ্ছিল৷ সেই সময় সংসারে অভাব অনটন দূর করতে ও কন্যাকে সুস্থ করতে মঞ্জু দেবীর পরিবার মরিয়া হয়ে ওঠে। অভাবের চোটে তিনি প্রতিবেশী এক ফুচকা বিক্রেতার কাছে ফুচকা বানানো শেখেন। তারপর ঐ এলাকায় রাস্তার পাশে তিনি ফুচকা ও চাটের স্টল তৈরি করেন। তাঁর হাতের তৈরি ফুচকা চাট ফুচকা প্রেমীদের কাছে সেরা হয়ে ওঠে। জনপ্রিয় হয় বৌদি'র ফুচকা। প্রায় ১০ বছর ধরে ফুচকা বিক্রি করে বর্তমানে অর্থ উপার্জনে সাফল্য লাভ করেছেন তিনি। তাঁর স্বামী বর্তমানে নিজের একটি স্টেশনারী দোকান খুলেছেন৷ তাঁর মেয়েকে তিনি চিকিৎসার বন্দোবস্ত করে সম্পূর্ণ সুস্থ জীবন দিয়েছেন।   

পূর্ণিমা পাল, তাঁর স্বামী একজন কারখানার শ্রমিক। যিনি একেবারেই অল্প আয় করেন। বাড়িতে ছোটো মেয়ে, তাকে বড় করতে হবে। তাই সাংসারের হাল ধরতে তিনি ফুচকা ব্যবসা আরম্ভ করেন। তিনি ইউটিউব থেকে ফুচকা তৈরি করা শেখেন। এরপরই তিনি ফুচকার স্টল খুলে ফুচকা বিক্রি করতে থাকেন। তিনিও সফল হয়েছেন মঞ্জু দে'র মতো ফুচকা বিক্রি করে।  

দুর্গাপুরের আশীষ নগর এলাকার গৃহবধূ কবিতা বিশ্বাস, তাঁর স্বামী প্রথমে ফুচকা বিক্রি করলেও বর্তমানে একজন পরিযায়ী শ্রমিক। যিনি সংসার চালানোর জন্য একটা টাকাও বাড়িতে দেন না। মাঝে মাঝে বাড়িতে এলে অশান্তি করতে থাকেন তিনি। একদিন কবিতা বিশ্বাসকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, "তোমার রাস্তা তুমি বুঝে নাও।" এমতাবস্থায় দুই সন্তানের জন্মদাত্রী কবিতা দেবী স্বামীর ফেলে যাওয়া পেশাকেই আপন করে নেন৷ গত ৯ বছর ধরে ফুচকা বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন তিনি৷ এনাদের দেখেই উৎসাহিত হয়ে ফুচকা বিক্রির পেশায় এসেছেন বীণা বিশ্বাস সহ আরো কয়েকজন অভাবী গৃহবধূ। 

দুর্গাপুরের এই বৌদিদের উদ্যোগ এটাই প্রমাণ করছে যে কোনো কাজই ছোটো নয় যদি সেটাকে মন দিয়ে করা যায়। আজকাল যখন কেউ পড়াশোনা করার পরও যদি চায়ের দোকান খুলে বসে, জামাকাপড়ের দোকান খুলে বসে, ফুচকার দোকান খুলে বসে, মিষ্টির দোকান খুলে বসে তাদেরকে নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ হাসাহাসি করে। কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়াতে এদের নিয়ে বিদ্রুপ করে। বাস্তবে যার কোনো মানে হয়না৷ যার যে যে পেশা ভালো সে সেই সেই পেশাকে গ্রহণ করবে। চা ব্যবসা, জামাকাপড় ব্যবসা কোনোটাই কিন্তু খারাপ ব্যবসা নয়। অনেকে তো আবার এগুলোকে ব্যবসা বলেই মনে করেন না৷ ব্যবসা মানে যে নিজের উদ্যোগে কোনো পণ্য কেনাবেচা সেটাও সকলে ভুলে যান। 

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো শহরের মহিলা ব্যবসায়ী ব্রুক এডি চা বিক্রি করে আজকে ২০০ কোটি টাকার মালিক। চট্টগ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম সেলাই মেশিনের ব্যবসা করে আজকে ৮৫০০ কোটি টাকার মালিক। কলকাতার মেয়ে পায়েল সাহা  আমেরিকাতে কাঠি রোল বিক্রি করে আজকে ১৪ মিলিয়ন ডলারের মালিক৷ কলকাতার ছেলে রণদীপ সাহা নকশা আঁকা মাটির ভাঁড় ও কাপ বিক্রি করে মাত্র ২২ বছর বয়সে ১০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন৷ এরকম প্রচুর উদাহরণ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। অতএব যে-কোনো কাজকে ছোটো করে দেখার প্রবৃত্তি বন্ধ হোক। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments