Header Ads

অরুণাচলের কামেং নদীকে বাঁচানোর দায়িত্বে বাঙালি বিজ্ঞানী


অরুণাচলের অন্যতম একটি নদী হলো কামেং নদী। যে নদীটি ভারত-তিব্বত সীমান্তের কাছে অরুণাচল প্রদেশের গৌরী সেন পর্বতমালার ৬ হাজার ৩০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত একটি হিমবাহ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। কামেং নদীর দৈর্ঘ্য ২৬৪ কিলোমিটার। এই নদীটির অববাহিকা অঞ্চলের আয়তন ১১,৮৪৩ বর্গ কিলোমিটার। 


এই কামেং নদীতে হঠাৎই ঘোলা জল প্রবাহিত হতে দেখা যাচ্ছিল। এমনকি নদীতে মাছেদের মড়কও শুরু হয়ে যায়। ঠিক কী কারণে নদীতে এরকম ঘটনা ঘটছে তা অনুসন্ধানের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইসার কলকাতার বিজ্ঞানী পুণ্যশ্লোক ভাদুড়িকে। তিনি তাঁর পুরো টিম নিয়ে নদীটি পর্যবেক্ষণ করে যে তথ্য তুলে ধরেছেন তা বিস্ময় তৈরি করার মতো। নদীকে পূর্ব অবস্থায় ফেরানো, ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে পাওয়া এবং অদূর ভবিষ্যতে এহেন ঘটনা যাতে না ঘটে তার প্রতিকারের জন্য সুপারিশ করবেন তিনি।   

প্রাথমিক ভাবে এই ঘটনাকে চিনের কারসাজি বলে ধরা হচ্ছিল। যদিও ব্যাপারটা নিয়ে  তদন্ত করার পর জানা যাচ্ছে অন্য কারণ। প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী এটিকে প্রাকৃতিক কারণ হিসেবেই ধরা হচ্ছে। ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের সেন্টার ফর ক্লাইমেট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের প্রধান পুণ্যশ্লোক ভাদুড়ির মতে, স্যাটেলাইট চিত্র ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। তাতে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে মাটি ধস ও তুষার ধসই এর প্রধান কারণ। জলের সঙ্গে মাটি মিশেই এভাবে কর্দমাক্ত হয়েছে নদীর জল। তবে সরকারি অনুমতি নিয়ে ড্রোন ক্যামেরা দিয়েও নজরদারি চালানোর চেষ্টা চলছে। জনবিরল এবং দুর্গম অঞ্চলে ঘটনাটি ঘটায়, প্রকৃত ঘটনাটি কেউ স্বচক্ষে দেখেননি। 

কামেং নদীর বৈশিষ্ট্য হলো আসামে এর ভিন্ন নাম। আসামে প্রবেশের পর এ নদীর নামকরণ হয়েছে জিয়া ভরেলি। যার নিম্ন অববাহিকায় অসংখ্য মানুষের বসবাস, যাঁরা নদীমাতৃক সভ্যতার মানুষ। তাঁরা নদীকে কেন্দ্র করেই বেঁচে আছেন। তাঁরা জীবিকার জন্য নদীর মাছের ওপর নির্ভরশীল। বাঙালি বিজ্ঞানী পুণ্যশ্লোক বাবু বলেন, পুরো নদীতেই মাছ ক্রমশ শূন্য হয়ে গিয়েছে বললেই চলে। মাছ ক্রমশ শূন্য হওয়ার জন্য নদীতে অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে ক্ষতিকারক কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া। কারণ এর সঙ্গে অনেক নিকাশি নালারও যোগসূত্র রয়েছে। সেই জল দ্রুতগতিতে বইতে না পেরে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে।  

কামেং নদীকে তাহলে বাঁচাতে হলে কী করা প্রয়োজন? এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী বলেন, কামেংয়ের উপনদীগুলি পুরোপুরি ঠিক আছে৷ তাই, সেখানে মাছ ধরা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হবে, যাতে সেই মাছ পরে কামেং নদীতে এসে পড়ে। এভাবে মাছের সংখ্যা বাড়ানো গেলেও জলের বাস্তুতন্ত্র আগের জায়গায় পৌঁছাতে বহু সময় লাগতে পারে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের৷ অতি দ্রুত বন্ধ করতেই হবে নিকাশি নালাগুলি। অন্তত জল শোধন করে তা ফেলতে হবে নদীবক্ষে। নদীর বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক সেন্সর বসিয়ে জলের গুণগত মান ও অন্যান্য বিষয় পরীক্ষা করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments