Header Ads

মনের মানুষ, মানব রতন ফকির লালন সাঁই


জীবনের শেষ পর্যায়ে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সাঁই, রোগশয্যায় শেষের দিনগুলোতে দুধ ছাড়া কিছুই খেতেন না। তবে মাছ খেতে চাইতেন।

শেষের সময় যে আগত, সাধন সঙ্গিনী ও ধর্মকন্যা পিয়ারী তা বেশ বুঝতে পেরেছিলেন। তাই সাঁইজিকে কাছ ছাড়া করতেন না। লালন কিন্তু তাঁদের বুঝতে দিতেন না, কষ্টের কথা।


শিষ্যদের বলছিলেন, "ইন্তেকাল হলে হিন্দু মতে দাহ হবে না। আবার ইসলামি মতে জানাজা নামাজও পড়া যাবে না।"

দিনটা ছিল পয়লা কার্তিক...

সাঁইজির চলে যাওয়ার দিন, শিষ্যরা নাম-গান করেছে - 'পার কর হে দয়াল চাঁদ আমারে।/ ক্ষম হে অপরাধ আমার ভবকারাগারে। শেষের দিন সাঁইজিও সারা রাত গান করেছেন... 'পাখি কখন যেন উড়ে যায়।/ বদ হাওয়া লেগে খাঁচায়।'

সেই কার্তিকের ভোরকে কলমে বেঁধে গিয়েছেন বসন্তকুমার পাল। তিনি লিখছেন, "স্বরলহরী থামিয়া গেল, সমস্ত গৃহতল নীরব নিস্তব্ধ, ইহার পর শিষ্যগণকে সম্বোধন করিয়া 'আমি চলিলাম' বলিয়া তাঁহার কণ্ঠ হইতে শেষ স্বর উচ্চারিত হইল, নেত্রদ্বয় নিমীলিত করিলেন, সমাজ পরিত্যক্ত দীন ফকিরের জীবননাট্যের যবনিকাপাত হইল।"

আজ পয়লা কার্তিক নয়। ১৭ই অক্টোবর। ইংরেজি মতে আজ সাঁইজির ফেরার দিন।

তাঁর দুটো ধর্মতত্ত্বের গান, আজকের জন্য ; কারণ আজকের ভোর রাতের চেয়েও শক্তিশালী দীর্ঘ আঁধারে ডুবে আছে।

(১) সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।/ লালন বলে জাতের কি রূপ দেখলাম না এই নজরে।/ কেউ মালায় কেউ তসবি গলায়,/ তাইতো যে জাত ভিন্ন বলায়।/ যাওয়া কিম্বা আসার বেলায়, জাতের চিহ্ন রয় কার রে।

(২) জাত গেল জাত গেল বলে/ একি আজব কারখানা সত্য কাজে কেউ নয় রাজি সব দেখি তা না না না।/গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায় তাতে ধর্মের কী ক্ষতি হয়/ লালন বলে জাত কারে কয় এই ভ্রমও তো গেল না।

প্রতিবেদন- সৌভিক রাজ


No comments