Header Ads

নহবতের সুর বাজানো হয় আমোদপুরের চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজোতে


থিম থেকে বনেদি বাড়ির পুজো সকল দুর্গাপুজোতেই আছে একরাশ আনন্দ ও উত্তেজনা। সামনেই পুজো, তাই জোরকদমে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। রাজ্যের সকল জেলাতেই জাঁকজমক ভাবে উদযাপিত হয় দুর্গাপুজো৷ পূর্ব বর্ধমানের মেমারির আমোদপুরের চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো, যার বয়স ৩০০ বছরেরও বেশি৷ এখানকার পুজো দেখতে পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ ভিড় করেন৷ তার একটাই কারণ হলো ইতিহাসের টান। 


মেমারি থেকে মাত্র তিন মাইল দূরত্বে পড়ছে আমোদপুর৷ এখানে যে চৌধুরী পরিবারে দুর্গাপুজো হয়, সেই পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অজানা ইতিহাস। চৌধুরী বাড়ির এই পুজোর সূচনা করেন অনাদিরাম সেন৷ মোগল সম্রাট শাহজাহানের আমলে তিনি মুর্শিদাবাদে জমিদারি পান। বর্গি হামলায় ক্লান্ত হয়ে তিনি মুর্শিদাবাদ ত্যাগ করে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির আমোদপুর গ্রামে চলে আসেন। তাঁর বংশধর চন্দ্রশেখর চৌধুরী। আমোদপুরের জমিদার হয়েও সুন্দরবনের মসজিদবাড়ি এলাকারও জমিদারি পান তিনি৷ সেই থেকেই জমিদারবাড়ির পুজো চৌধুরী বাড়ির পুজো বলেই পরিচিতি লাভ করে৷ 

নহবতের সুর ও ঝাড়লণ্ঠনের আলোয় সেজে ওঠে এই পুজো। এখানে দেবীর আরাধনা হয় কালিকাপুরাণ অনুসারে। বোধনের সাতদিন আগে পুজো শুরু হয়। ষষ্ঠীর দিন এই বাড়ির মেয়েরা কনকাঞ্জলি হিসেবে একমুঠো করে চাল ও ডাল সংগ্রহ করেন, যা দিয়ে আল্পনা দেওয়া হয়। পুজোর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো এখানে কোনো বিগ্রহেই চাঁদমালা পরানো হয় না, এমনকি বাহনও থাকে না।

অষ্টমীর দিন প্রথা মেনে কুমারী পুজো হয়। নবমীর দিন ধুনো পোড়ানো হয়। এই পুজোর সবচেয়ে ভালো দিক হলো এখানে কোনো পশুবলি দেওয়া হয়না৷ নবমীর দিন কেবল আখ ও কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। প্রাচীন রীতি অনুযায়ী এখানে দশমীর সন্ধ্যায় মশাল জ্বেলে এবং আদিবাসী নৃত্যসহকারে প্রতিমা তেলিপুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়। এই শোভাযাত্রা দেখার জন্য এখানে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন। 

পনেরো দিন ধরে চলে চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো। এই পুজোর বিশেষত্ব হলো এখানে মাকে অন্নভোগ দেওয়া হয়না৷ পুজোর প্রত্যেকটা দিন মাকে নিবেদন করা হয় লুচি, মোহনভোগ, ফল, মিষ্টি, রসকড়া, নাড়ু প্রভৃতি। পুজোর কদিন রাত্রিবেলায় শীতলভোগ উপাচার দেওয়া হয়। পুজো দেখার জন্য চৌধুরী পরিবারের সকল আত্মীয়রা আমোদপুরে উপস্থিত হন। নহবতের সুরে জমজমাট হয়ে ওঠে বছরভর ঝিমিয়ে থাকা দুর্গাদালান। চৌধুরী বাড়িতে পুজো উপলক্ষে অষ্টমী ও নবমীর দিন রাতে নাটকের আসর বসে। নাচগানে জমিদারবাড়ি গমগম করতে থাকে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সন্ধ্যারও আয়োজন করা হয়। পুজোর কটা দিনের জন্য চৌধুরী পরিবারের সদস্য, পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা সকলেই সারা বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকেন।  

প্রতিবেদন- সুমিত দে 


No comments