Header Ads

বাংলা জুড়ে নিয়মিত কমছে তালগাছের সংখ্যা


তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে/ সব গাছ ছাড়িয়ে/ উঁকি মারে আকাশে। বাঙালির জীবনের সাথে তালগাছের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তালগাছে ঝুলে থাকা সারি সারি বাবুই পাখির বাসা, তালচড়ুইদের উড়ে যাওয়া, বৃষ্টির কালোছায়া মেঘে তালগাছের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া চাতকের দৃশ্য একসময় ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তবে সময়ের নিয়মে বাড়ছে নগরায়ন যার ফলে জমির আলের ধারে থাকা সারি সারি তালগাছের সংখ্যা কমছে দিন দিন।


তালের রস, তালশাঁস, তালকুড় এসব খাওয়ার একটা আলাদা আনন্দ ছিল, যা ক্রমশ কমছে। তালদীঘিতে জলের ওপর নুয়ে থাকা তালগাছ থেকে পুকুরে লাফ দেওয়া, ভোর বেলায় উঠে তাল কুড়োতে যাওয়া এসবের মতো আনন্দ হয়তো কম জিনিসেই আছে। তালপিঠেও বাঙালির কম প্রিয় নয়। জঙ্গলমহলে শালপাতায় মোড়া তালের পিঠের মতো বহু রকমারি খাবার তৈরি হতো। যদিও তালগাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাদেরও শ্রাবণ ভাদ্র মাসে আর আগের মতো প্রতিদিন পিঠে হয়না। 

আগে তালগাছের গুড়ি দিয়ে মাটির বাড়ির ধর্না, চালা তৈরি হতো, তালপাতায় ছাউনিও হতো। বর্তমানে মাটির বাড়িও কমছে দিন দিন যার ফলে তালগাছের অর্থনৈতিক গুরুত্বও কমছে যার ফলে তালগাছের সংখ্যা আরো সংকটে পড়ছে। 

তালগাছ কমে যাওয়ার ফলে কমে যাচ্ছে বাবুই পাখির বাসস্থান। বাবুই পাখির বাসায় জোনাকির আলো দেখে আনন্দ উপভোগ করার অবকাশও কমে যাচ্ছে। তালগাছের মরা পাতা, তালশাঁস খাওয়ার পর ব্যবহৃত তাল দিয়ে তৈরি গাড়ি চালানো, তালপাতায় তৈরি ভেঁপু এসব একসময় প্রতিটি শিশুরই ছিল খেলার অঙ্গ। আধুনিক খেলনার চাপে বর্তমানের বাচ্চারা এসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তালপাতার পাখা, চাটাই এসবও এখন আর সেভাবে বিক্রি হচ্ছে না বা ব্যবহৃত হচ্ছে না, ফলে বাঙালির অন্যতম ঐতিহ্য তালপাতার পাখাও হারিয়ে যাচ্ছে। 

তালগাছের সাথে বাঙালির এই সম্পর্ক যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য মনে হয় মানুষের সচেতনতা প্রয়োজন। তালের গুড়, তাল মিছরি, চিনি, তাল লবাত এসব নিয়েও তো শিল্প হতে পারে কিন্তু এসবের উদ্যোগ চোখে পড়েনা। এ ধরণের শিল্প উদ্যোগ নিলে তালগাছের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। বাড়ানো যেতে পারে বাবুই পাখির সংখ্যাও। তালগাছ বাঁচিয়ে রাখার ভাবনা হয়তো এখন থেকেই করা প্রয়োজন।

প্রতিবেদন- অমিত দে


No comments