পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলে বাঙালির স্বার্থে বাংলা পক্ষে যোগদান একাধিক যুবক-যুবতীর
গতকাল পশ্চিম বর্ধমান বাংলা পক্ষের দুর্গাপুর পূর্ব শাখার উদ্যোগে আয়োজিত একটি কর্মসূচিতে, বাংলা পক্ষে যোগদান করলেন গোপালপুর গ্রামের ৪০ জন যুবক-যুবতী এবং কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি। জাতীয় সংগ্রাম পরিষদের সদস্য রাজীব ভট্টাচার্য, আকাশ পৈতন্ডী, জেলা কমিটি সদস্য তন্ময় গড়াই, বিধানসভা সম্পাদক অর্ক ব্যানার্জী, অর্পণ গুঁই, শুভ কর্মকার, সৌরেন্দ্র দাশ, চঞ্চল গাঙ্গুলি সহ অন্যান্যদের উপস্থিতিতে বাঘছাল ডোরা-কাটা পতাকা তুলে নেন নব্য সহযোদ্ধারা।
বাংলা পক্ষ দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভার সম্পাদক অর্ক ব্যানার্জী বলেন, "দুর্গাপুর তথা শিল্পাঞ্চলের মাটিতে যথেষ্ট চাকরি ও পুঁজি থাকলেও তার ভোগদখল করছে বহিরাগতরা। বাংলার মাটিতে বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্যই গতকাল সবাই বাংলা পক্ষের ছাতার তলায় আসছে। বাংলার মাটিতে সমস্ত চাকরি ও টেন্ডার ভূমিসন্তানরা পাবে, এটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।"
জেলা কমিটি সদস্য তন্ময় গড়াই বলেন, "বাঙালির রক্তে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অথচ সেই বাঙালিই স্বাধীন ভারতে বঞ্চিত। আজ সেই ভারতীয় সেনা বাহিনীতে বাঙালির নামে একটা রেজিমেন্ট অবধি নেই। সমস্ত বঞ্চনার হিসাব বাংলা পক্ষ নেবে।"
সংগঠনের তরফে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সহ-সম্পাদক অর্পণ গুঁই বলেন, "বাঙালিকে সমস্ত পরিষেবা বাংলা ভাষায় পাওয়ার অধিকার সংবিধান দিয়েছে। অথচ, সেই অধিকারের কথা মনে করিয়ে দিতে গেলে বলা হচ্ছে তুমি 'বাংলাদেশী'। বাঙালিকে হিন্দু মুসলমানে বিভাজন করা হচ্ছে, অথচ, উত্তর ভারতের হিন্দুরা কিন্তু বাঙালির ধর্মকে আপন করে নিতে প্রস্তুত নয়।" অনুষ্ঠানে উপস্থিত সৌরেন্দ্র দাশ তখন যোগ করেন, "বিগত ৭ বছরে বাংলাতে যে পরিমাণে হনুমান মন্দির হয়েছে সেই পরিমাণে শীতলা মন্দির, ষষ্ঠী মন্দির কিংবা শনি মন্দির কি ইউপি-বিহারে হয়েছে? বাংলাতে হনুমান মন্দিরের ক্রম বর্ধমান সংখ্যা ইউপি-বিহারের পন্ডিতদের রুজির ব্যবস্থা করছে। অথচ, বাঙালি পুরোহিতদের রুজির সুযোগ কিন্তু কমে আসছে।"
নব্য সংগঠনে যোগ দেওয়া নজরুল খান বলেন, "চাকরি সূত্রে বহু উর্দুভাষী এলাকাতে ঘুরতে হয়েছে। প্রথমে ভাবতাম ধর্ম এক মানেই ভাইয়ের মতোই সাহায্য পাব। কিন্তু, অভিজ্ঞতা বুঝিয়েছে ধর্ম তোমার যাই হোক দিনের শেষে ওদের কাছে তুমি বাঙালি, এবং অবজ্ঞার পাত্র।" বাঙালি যে বাসে, ট্রেনে, চাকরি ক্ষেত্রে, চাকরির পরীক্ষাতে ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছে এ কথা স্বীকার করেন নতুন যোগ দেওয়া সহযোদ্ধাদের প্রায় সকলেই।
বাংলার মাটিতে বাংলাপক্ষের বিচরণের ইতিহাস সবেমাত্র তিন বছরের। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ডঃ গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এর মধ্যেই CAB, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডোমিসাইল চালু, ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসে বাংলাতে পরিষেবা ফেরানো সহ একাধিক সাফল্য তাদের ঝুলিতে। গত বিধানসভা নির্বাচনেও আমরা দেখেছি ভোটের অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছে বাঙালিয়ানা। আগামী দিনে বাংলার রাজনীতি, অর্থনীতি তথা সমাজ জীবনে বাংলা পক্ষ একটা ফ্যাক্টর হতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment