ম্যানগ্রোভ লাগালে মিলবে পুজোর পোশাক, সুন্দরবনে পরিবেশপ্রেমীদের নতুন উদ্যোগ
আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা, তারপর মা আসছেন। দুর্গাপুজোতে মেতে উঠবে আপামর বাঙালি সমাজ৷ কিন্তু সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের পুজোর সমস্ত আনন্দই ম্লান হয়ে গেছে। বছরভর যেভাবে একটার পর একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ সুন্দরবনের চরম ক্ষতি করেছে, তাতে সেখানকার মানুষের মধ্যে আনন্দ না থাকাটাই স্বাভাবিক। তবুও তারা চাইছেন পুজোর আনন্দ একটু হলেও উপভোগ করতে। যদিও সেই সুযোগ নেই বললেই চলে৷
নানান প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমরা মেতে উঠবো উৎসবের আনন্দে, সমস্ত ভয় ভীতি আতঙ্ক জয় করে। জীবনের, বেঁচে থাকার ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে মানুষের সাথে নিজেকে এক করে জীবন উপভোগ করার নামই হলো উৎসব। তাই সুন্দরবনের মানুষের মনে পুজোর আনন্দ সঞ্চারিত করতে এখানকার কয়েকজন পরিবেশপ্রেমীদের নতুন উদ্যোগ "ম্যানগ্রোভ লাগালে মিলবে নতুন পোশাক"।
এই নতুন উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ভিসন প্রবাহ খড়্গপুর আইআইটির গবেষকবৃন্দ, তমলুকের হিউম্যানিটি ইন পাওয়ার দ্য সোশ্যাল গ্রুপ অফ ইন্ডিয়া, তাম্রলিপ্ত বয়েজ পূর্ব মেদিনীপুর, পথের সাথী কলকাতা এবং নবীন লাথের পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিগণ। কাকমারির পরশমনি গ্রামের বাচ্চা ও ম্যানগ্রোভ লাগানো মায়েদের দিয়ে গত ৩ রা অক্টোবর শুরু হয়েছে উক্ত উদ্যোগটি। যা চলবে আগামী ১০ ই অক্টোবর পর্যন্ত।
উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, "প্রান্তিক মানুষের কাছে উৎসব এখন বাড়তি বোঝা। তাই আমরা ঠিক করেছি, সুন্দরবনের একেবারেই প্রান্তিক এলাকার ২ থেকে ১০ বছরের বাচ্চাদের হাতে নতুন জামা তুলে দেওয়া হবে। যাতে তাঁরাও উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়।পাশাপাশি বাঘের দ্বারা আক্রান্ত পরিবার ও একেবারেই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ৩৫০ জন মায়েদের একটি করে ছাপা শাড়ী দিয়ে সাহায্য করা হবে। এছাড়াও বিভিন্নভাবে বির্পযস্ত হয়ে যাওয়া মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের কিছু উন্নতি ঘটানো।"
এই উদ্যোগটির পরিকল্পনার পিছনে রয়েছেন বাংলার ম্যানগ্রোভ ম্যান উমাশঙ্কর মণ্ডল। তিনি বলেন, "সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ বাঁচানোর চেষ্টা হলেও সেটা খুব ফলপ্রসূ হচ্ছে না। তার জন্য এলাকার মানুষকে সবার আগে সামিল করা প্রয়োজন। সেই কাজটা বেশি করে করার চেষ্টা করছি৷ পুজোতে নতুন পোশাক পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাদাবনের গুরুত্বটা তাঁরা বুঝতে শিখবেন৷ ওনাদের মুখে হাসি দেখতে খুব ভালো লাগে। এতে করে ম্যানগ্রোভের যত্ন করারও আশ্বাস পাওয়া যায়। সুন্দরবনে একই বছরে একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় পাশাপাশি আর্থিক বিপর্যয় তো বটে, বাংলার অন্যান্য জেলাও বন্যায় ভাসছে, তার মধ্য চলছে আমাদের বৃহওর একটি ম্যানগ্রোভ প্ল্যান্টেশন এ্যান্ড কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের প্রজেক্ট।মানব জীবনের হাজারো সমস্যা থাকবে তবুও কিছু মানুষ অপরের হাসিতে আনন্দ পায়, শান্তি পায়, বেচেঁ থাকার চলার পথে নতুন স্বাদের অক্সিজেনের জোগান পায়। যাঁরা সারাবছর সুন্দরবন বাঁচানোর লড়াই করেন, আপনার আমার অক্সিজেনের যোগান দেওয়ার কাজ করে থাকে, পূজোয় কিছু উপহার দেওয়ার চিন্তাভাবনা তাদের জন্য।"
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment