Header Ads

ভোজনবিলাসী বাঙালির খাবারের ইতিহাস ও সাতকাহন, প্রকাশিত হলো 'পাক পাঁচালি'


বাঙালিদের মধ্যে খাবারের একটা দারুণ নিজস্বতা রয়েছে। ঝালে-ঝোলে-অম্বলে সবেতেই বাঙালির বানানো পদ একাই একশো। সত্যজিৎ রায় তাঁর সংলাপে উৎপল দত্তকে দিয়ে বলিয়েছিলেন আহারের এত বাহার এ শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব। যুগের পর যুগে বাঙালির খাবারের তালিকা বদলেছে কিন্তু স্বাদ বদলে যায়নি৷ বাঙালি জাতিকে সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা করা যায় খাবার দ্বারা। কালের নিয়মে বাঙালির খাবারের পাতে যেমন যুক্ত হয়েছে অজস্র পদ, ঠিক তেমনই হারিয়ে গেছে একাধিক পদও। 


পানিফলের ডালনা, ডিমের জিলিপি, হেমকনার পায়েস, কপির দম্পক্ত, শাকশশ্শরি, পিটুলি বাটা দিয়ে মাছ, তিল পটেশ্বরী, থোড়ের কড়ুই, বেগুন বিরিঞ্চি, তালআঁটির ডালনা, রসজ ইত্যাদি খাবার, শুধু বইয়ের পাতাতেই স্থান পেয়েছে। লোকমুখে প্রচার  পেয়ে ফিরে এসেছে কোফতা, দোমলা, মোচা ও থোড়। 

আবার বিদেশ ও ভিন রাজ্য থেকেও খাবার এসে ঢুকে পড়েছে বাংলায়। ভোজনবিলাসী বাঙালি নিজগুণে ধোকলা, ধোসা থেকে শুরু করে পিৎজা, বার্গারকে আপন করে নিয়েছে। বাঙালি জাতির গর্ব রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আদ্যপ্রান্ত ভোজনবিলাসী এক মানুষ। তিনি নিত্যনতুন রান্না খেতে পছন্দ করতেন। রাঙা আলুর পান্তুয়া আর মানকচুর জিলিপি ঠাকুরবাড়িরই সৃষ্টি। তাদের পাকঘর ছিল যেন এক গবেষণাগার। এখানেই নিত্যনতুন খাবারের জন্ম হতো। খাবারের এই প্রেম বহু মানুষের মধ্যেই দেখা গিয়েছে। শোনা যায়, রামমোহন রায় আস্ত একখানা পাঠা খেয়ে ফেলতেন। জগদীশচন্দ্রের প্রিয় খাবার ছিল কচ্ছপের ডিমের ডালনা, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে সত্যজিৎ রায়, উত্তম কুমার সকলেই ছিলেন ভোজন রসিক৷ 

এরকম হরেক রকম বাংলা ও বাঙালির খাবারের ইতিহাস উঠে এলো বিশিষ্ট লেখক ও প্রাবন্ধিক সৌভিক রাজের লেখা নতুন বই 'পাক পাঁচালি'তে। এটি একটি তথ্যমূলক প্রবন্ধেই বই। উত্তরণ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে বইটি। ২০১৫ সালে স্থাপিত উত্তরণ প্রকাশনী ইতিমধ্যেই মোট ৫০ টি বই প্রকাশ করে ফেললো। গবেষণামূলক তথ্য ভিত্তিক বই ও ক্যুইজ এর বই প্রকাশ করে থাকে এই প্রকাশনী সংস্থা। সুস্মিতা মুখোপাধ্যায় ও পবিত্র মুখোপাধ্যায় হলেন উত্তরণ প্রকাশনীর কর্ণধার। 

যারা ফুড ভ্লগিং এর ছলে বাংলা ও বাঙালির খাবারের নানাবিধ ইতিহাস বলতে বা চর্চা করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এই বই যথেষ্ট কাজে লাগবে। যারা খাবার খেতে ও খাবারের বই পড়তে ভালোবাসেন তাদেরও অগাধ আনন্দদান করবে এই বইটি। 'পাক পাঁচালি'তে কেবল খাবারের ইতিহাসই নয়, বাংলা ও বাঙালির গল্প-ঐতিহ্য সবই আছে। 

বইটি লেখার প্রসঙ্গে লেখক-প্রাবন্ধিক সৌভিক রাজ লিটারেসি প্যারাডাইসকে বলেন, "বই লেখা অনেকটা পরীক্ষা দেওয়ার মতো। আমার পরীক্ষা দেওয়া শেষ। এইবার পাঠকই পরীক্ষক। পাঠকমহলে বইটি সমাদৃত হলে সেটিই হবে পরম প্রাপ্তি।" 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

  

No comments