শাল ও হোগলা পাতার নৌকা বানিয়ে নজর কাড়ছে হুমগড় সার্বজনীন দুর্গোৎসব
শাল-মহুয়া-পিয়ালের স্বর্গরাজ্য হলো বাংলার জঙ্গলমহল। সারি সারি সবুজ শাল গাছেদের সৌন্দর্য প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের মনের তৃষ্ণা নিবারণ করে। জঙ্গলমহলের প্রকৃতির কথা বলতে গেলে শালের কথায় প্রথমে ভেসে আসে৷ শালের পাতা ও শাল ফুলের গন্ধে মাতাল হয়ে যেতে হয় প্রকৃতিপ্রেমীদের৷ সারা শাল জঙ্গলে যৌনগন্ধী সুবাতাস প্রাণে পরশ লাগায়৷ শাল ফুলের ঘ্রাণ যারা আস্বাদন করেছেন তারাই জানের শাল জঙ্গলের গুরুত্ব।
শাল জঙ্গলকে ঘিরে অনেক মানুষের জীবিকাও বেঁচে রয়েছে। শাল গাছের পাতা থেকে থালা-বাটি তৈরি করে অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। উৎসব-অনুষ্ঠানে ভোজনের জন্য শাল পাতার কোনো তুলনা হয়না। বাড়িতে অনেক রান্নার পদ যেমন পোড়া মাংস, পোড়া মাছ, পোড়া তিল বাটা প্রভৃতির জন্যও শাল পাতা কাজে লাগে৷
আপনারা হয়তো এতক্ষণ ভাবলেন যে আমরা জঙ্গলমহলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করছি, কিন্তু না; আমরা কথা বলছি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার 'হুমগড় সার্বজনীন দুর্গোৎসব'-এর কথা। যেখানে এ বছর মণ্ডপের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে শাল পাতার ব্যবহার হয়েছে। এই শাল পাতার কথা বলতে গেলে জঙ্গলমহলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কথা না বললেই নয়। তাই সেই কথাই প্রথমে তুলে ধরা হলো।
বিগত কয়েক বছর ধরে জেলার মানুষের দৃষ্টিপাত করছে হুমগড় সার্বজনীন দুর্গোৎসব। প্রায় সাত দশক ধরে এখানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে৷ চলতি বছরে এই পুজো ৬৮ তম বর্ষে পদার্পণ করলো। এ বছর তাদের পুজোর থিম হলো বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা। তবে উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, "জঙ্গলমহলের প্রাণকেন্দ্র শাল জঙ্গল। আর বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের অন্যতম ভরসা নৌকা। শাল পাতা আর হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি আমাদের নৌকা আকৃতির প্যান্ডেল।"
শাল ও হোগলা পাতার নানান কারুকার্য দিয়ে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুর সংলগ্ন উদ্ভবপুরের থিমমেকার চন্দন রায়ের ভাবনা ও সৃজনে মণ্ডপটি নির্মিত হয়েছে। মণ্ডপের রূপ দর্শকদের দারুণভাবে আনন্দদান করছে। মণ্ডপের পাশাপাশি প্রতিমার অনন্য রূপও নজর কাড়ছে। পুরস্কারপ্রাপ্ত কুমোরটুলির শিল্পীরা তৈরি করেছেন এখানকার প্রতিমা৷ এ বছর বিশ্ব বাংলার বিচারে জেলার সেরা পুজোর স্বীকৃতি অর্জন করেছে হুমগড় সার্বজনীন দুর্গোৎসব।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment