পশ্চিম বর্ধমানের ইকড়ায় বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজোয় দেবী আসেন পালকিতে
১২১ বছরে পা দিয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজো। ঐতিহ্য এবং সাবেকি আনার এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস। নীচে কয়লা উপরে ধান, জেলার নাম বর্ধমান। এই প্রবাদ বর্ধমান জেলার প্রাকৃতিক চরিত্র এক কথায় বর্ণনা করে। একদিকে শিল্পাঞ্চল অন্য দিকে সোনালী ধানের ক্ষেত। মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে ছোট বড় নদী। আর এই নদী, শাখানদীর পলি মাটির গভীরে বাংলার জীবন যাত্রার শিকড় বিস্তার করেছে যুগের পর যুগ।
বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস খুঁজতে গেলে প্রথমেই আসে এই পুজোর প্রতিষ্ঠাতা লিয়ালরাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। তিনিই এই পুজোর প্রচলন করেন। পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি লৌকিক কথা। জানা যায় লিয়ালরাম বন্দ্যোপাধ্যায় স্বপ্নে দেখেন গ্রামের সিঙ্গারন নদীতে ভেসে এসেছে তিনটি ঘট। বাস্তবে দেখা যায় সত্যি সত্যিই তিনটি ঘট ভেসে এসেছে সিঙ্গারন নদীতে। তিনটি ঘটের মধ্যে একটি ঘট নিয়ে আসা হয় বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গা মন্দিরে। আরেকটি ঘট স্থাপন করা হয় বাগদি বুড়ির দুর্গা মন্দিরে। অপর ঘটটি নিয়ে যাওয়া হয় তপস্বী দুর্গা মন্দিরে।
সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত একই রকম ভাবে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে দুর্গা পুজো পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা আত্মীয় পরিজনরা পুজোর চার দিন চলে আসেন বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে। প্রথা মেনে, বিবিধ উপাচারে আবাহন করা হয় শক্তি রূপিণী দেবী দুর্গার। প্রাচীন প্রথা মেনে আজও অষ্টমীতে কুমারী পুজো হয় বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গা পুজোতে।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রথা চালু আছে এই দুর্গা পুজোকে ঘিরে। ইকড়া গ্রামে চারটি দুর্গা পুজো হয়। বড় দুর্গা, বিন্দু বাসিনী, মেজো দুর্গা ও ছোট দুর্গা। সপ্তমীর দিন প্রথমে বড় দুর্গা তারপর বিন্দু বাসিনী দুর্গা ও ক্রমান্বয়ে মেজো দুর্গা এবং ছোট দুর্গার পালকি শোভাযাত্রা সহকারে স্বীয় মণ্ডপে প্রবেশ করে। ঠিক বিসর্জনের সময়েও একই ভাবে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। এই প্রথা প্রথম থেকেই চলে আসছে।
প্রতিমা তৈরি হয় মন্দির প্রাঙ্গণেই। কাঠামোর উপর মাটির প্রলেপ তারপর খড়িমাটির আস্তরণ। ধীরে ধীরে রঙ দেন শিল্পী। তারপর চক্ষু দান। মৃন্ময়ী হয়ে ওঠে বাংলার কন্যা, ঘরের মেয়ে।
এই বছরও একই ভাবে ১২০ বছরের ঐতিহ্য মেনে পালিত হতে চলেছে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গোৎসব। বছরের পর বছর ধরে ধর্ম, লোকাচার যখন সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে জনমানসের জীবনের চরিত হয়ে উঠেছে ইকড়া গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির এই পুজো। এই ধারা আগামীতেও পরিবারের উত্তরপুরুষরা বয়ে নিয়ে চলবে বলে বিশ্বাস পরিবারের বর্তমান সদস্যদের।
প্রতিবেদন- অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়
Post a Comment