সুন্দরবনের মধুর স্বত্ব নিয়ে বিতর্ক, পুনের এক সংস্থার বিরুদ্ধে রণাঙ্গনে বাংলা
সুন্দরবনের মানুষের প্রধান জীবিকা হলো মৎস্য শিকার ও মধু আহরণ। সুন্দরবন হলো মধু সংগ্রহের আঁতুড়ঘর। দেশজুড়ে বেশ সুনাম রয়েছে সুন্দরবনের মধুর। মধু সংগ্রহ করার জন্য সুন্দরবনের মানুষকে যেতে হয় ঘন জঙ্গলে। এই মধু সংগ্রহ করার কাজটা বেশ কষ্টসাধ্য। সুন্দরবনের মানুষ জীবন হাতে নিয়ে মধু সংগ্রহ করতে যান। মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বহু মানুষ নরখাদক বাঘের কবলে পড়ে মারা যান। তাঁরা জীবন বাজি রেখেই আমাদের ঘরে ঘরে মধু পৌঁছে দিচ্ছেন। সুন্দরবনের মধু বাংলার ও বাঙালির।
সুন্দরবনের মধুর বিশ্বব্যাপী সুনাম থাকলেও এর কোনো জিআই নেই। বাংলার নিজস্ব পণ্য হওয়া সত্বেও সুন্দরবনের মধুর জিআইয়ের জন্য সম্প্রতি আবেদন করেছে পুনের এক সংস্থা। বাংলার নিজস্ব এই পণ্যের স্বত্ব নাকি তাদেরই! জানা যাচ্ছে এই দাবির স্বপক্ষে একগুচ্ছ 'প্রমাণপত্র' সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা করেছে তারা। যা নিয়ে শুরু হয়েছে ঘোর বিতর্ক। বিষয়টি নজরে আসামাত্রই তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে এ রাজ্যের প্রশাসন।
পশ্চিমবঙ্গের যে প্রাকৃতিক মধু পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগটাই আসে সুন্দরবন থেকে৷ এই মধুর দেশজোড়া চাহিদা রয়েছে৷ বাংলার অর্থনীতির একটা বড়ো অংশ হলো সুন্দরবনের মধু৷ ভিন রাজ্যের এক সংস্থা জিআইয়ের জন্য আবেদন করার পর সরব হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর। তারা চেন্নাইয়ে জিআই কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, কোনোভাবেই ঐ সংস্থা জিআই পাওয়ার যোগ্য নয়৷ এমনকি সুন্দরবনের বেশ কয়েকজন মধু সংগ্রাহক রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, কৃষি মন্ত্রক ও রাজ্য বন দপ্তরের অনুমতির সাপেক্ষে তাঁরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মধু সংগ্রহ করেন। অতএব জিআই তকমা বাইরের কোনও সংস্থা নিয়ে যেতে পারে না৷
পুনের সংস্থাটির জিআই আবেদনের বিরোধিতার পর রাজ্য সরকার নিজেও জিআই-এর জন্য আবেদন করে। তা করা হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির আওতায় থাকা পেটেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারে৷ জিআই বা জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশনের তকমা পাওয়ার কয়েকটি নিয়ম আছে। সেই নিয়মে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছে যে জায়গার নিজস্ব কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রোডাক্ট আছে, একমাত্র জিআই ট্যাগ তারাই পাওয়ার যোগ্য। পুনের সংস্থাটির জিআই ট্যাগের জন্য আবেদন করা আদতেই জিআই-এর নিয়ম বিরুদ্ধে। তাহলে কেন অর্থের লোভে পুনের ঐ সংস্থা মিথ্যে নাটক শুরু করেছে? প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এই লড়াইতে শেষ পর্যন্ত কে জিতবে তারই অপেক্ষায় এখন প্রহর গুণছে সমগ্র বাঙালি সমাজ৷
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment