চপ-ও প্রতিদিন লাখ টাকার বিক্রি করা যায় প্রমাণ করে পাঁশকুড়ার চপ
দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন মেলাতেই চোখে পড়ে মেলার এক প্রান্তে বড় চপের দোকান। দেখতে পাবেন মাইকে প্রচার হচ্ছে 'রাজুর পাঁশকুড়ার চপ'। যে চপ খাওয়ার জন্য চোখে পড়ার মতো ভিড় লক্ষ্য করা যায়। বড় প্যান্ডেল খাঁটিয়ে তৈরি এই দোকান আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই।
বাস্তবে রাজুর পাঁশকুড়ার চপ কিন্তু কোনো একজন মালিকানাধীন নয়। বর্তমানে এই নামে বহু দোকান বিভিন্ন মেলায় মেলায় বসে সারা বছর। দুর্গাপূজার মতো মেলায় কোনো কোনো দোকানে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার চপ বিক্রি করে বাংলার নিজস্ব লোকব্র্যান্ড। লোকশিল্প যদি হয় তাহলে তো লোকবিপনী বা লোকব্র্যান্ড-ও হতে পারে। এরকম লোকব্র্যান্ডের উদাহরণ বাংলায় অনেক পাওয়া যায়।
যেহেতু এইসব দোকান গুলোতে এভাবে মাইকিং করা তারপর সৌন্দর্যের আলোকে দোকান তৈরি হয় তাই ভ্যালু অ্যাডিসন হয়ে চপের দাম থাকে প্রায় দ্বিগুণ যার ফলে দোকানদাররা বেশ লাভবান-ও হয়।
এই চপ দোকান গুলিতে ভেজিটেবল চপ, আলুর চপ, চিংড়ির চপ, মোচার চপ, ডিমের চপ, পনির চপ, চিকেন পকোড়া, মশলা চপ এরকম বিভিন্ন রকমারি চপ পাওয়া যায়।
সত্যজিৎ রায়ের জন অরণ্য সিনেমায় দেখানো হয়েছে কিভাবে বড়বাজারের রাস্তার পুঁজি আছে এবং বাঙালি তা থেকে নিজেকে সরিয়ে হীনমন্যতা তৈরি করছে। এইসব ব্যবসাকেও যে ব্যবসা বলে তা সত্যজিৎ রায় দেখিয়েছেন চোখে আঙুল দিয়ে।
বাঙালি একসময় এরকম বিভিন্ন রকমের নিজস্ব ব্যবসা তৈরি করেছে যেমন জয়নগরের মোয়া, কুমারটুলির প্রতিমা, চন্দননগরের আলোকসজ্জা, পাঁচমুড়ার পোড়ামাটির মূর্তি, বিষ্ণুপুরের বালুচরি শাড়ি, রামজীবনপুরের কাঁসা, সবং এর মাদুর, কাঁথির প্যান্ডেল শিল্প, কাঁথির কাজুবাদাম, ক্ষীরাই এর ফুল, জনাই এর জলভরা সন্দেশ, বেলিয়াতোড়ের ম্যাচা সন্দেশ, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, মুগবসানের মুগের জিলিপি, ক্ষীরপাইয়ের বাবরসা ইত্যাদি। এ ধরণের আরো নতুন ব্যবসায় মনোনিবেশ করা বর্তমান বাঙালির অবশ্যই কর্তব্য। এইসব বিষয়ে অবজ্ঞা অবহেলা না করে বাঙালিকে ব্যবসা করতে হবে। 'বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী' যে বাঙালির প্রাচীন স্লোগান সেই বাঙালি জাতির হীনমন্যতা কখনোই কাম্য নয়।
প্রতিবেদন- অমিত দে
Post a Comment