Header Ads

৪০০ বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা ছড়াচ্ছে রায়গঞ্জের মেহেন্দি গ্রামের দুর্গাপুজো


ধর্ম যার যার, উৎসব সবার-- এ কথা আমরা সকলেই জানি। বাস্তবেও আজকাল তার প্রতিফলন ঘটছে৷ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের একটাই পরিচয় হলো আমরা সকলেই মানুষ। অতএব কোনোমতেই যাতে মানবিকতা আমাদের মন থেকে হারিয়ে না যায়, সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। যদিও মানবিকতার কখনো মৃত্যু হয়না৷ মানুষ শান্তিপ্রিয় হয়েই দিন কাটাতে চায়। আজকে চারিদিকে এই যে হানাহানি, অসহিষ্ণুতা, ধর্মীয় বিদ্বেষ; যার প্রকৃত অর্থে কোনো মানেই নেই। একমাত্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই মানুষকে মানুষ হতে শেখায়। 


সামনেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। জেলায় জেলায় বিভিন্ন রীতি ও বিভিন্ন নিয়মে দুর্গাপুজো হয়ে থাকে। যত দিন যাচ্ছে ততই ধর্ম নির্বিশেষে দুর্গাপুজো সর্বজনীন হয়ে উঠছে। উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ শহরের নিকটবর্তী মেহেন্দি গ্রাম, যেখানে হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়ে প্রাচীন প্রথা মেনে ৪০০ বছর ধরে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। আজও সেই ঐতিহ্য অটুট। এই পুজো প্রত্যেক বছর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা বহন করে। এই পুজোতে বজায় থাকে এক টুকরো শান্তি। 

রায়গঞ্জ শহর থেকে দশ কিমি দূরে মেহেন্দি গ্রামে দুর্গাপুজোর প্রচলন হয় প্রায় ৪০০ বছর আগে৷ কথিত আছে, অবিভক্ত বাংলাদেশের হরিপুরের জমিদার দুর্লভ রায় চৌধুরী এই পুজো শুরু করেন। পুজোর সময় এখানকার সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে হরিপুরে জমিদারের বাড়ি গিয়ে পুজোর সামগ্রী বাঁকে করে নিয়ে আসতেন এই মেহেন্দি গ্রামে। দেশভাগের পরবর্তী সময়ে মেহেন্দি গ্রামের লোকজন মিলিতভাবে সর্বজনীন এই দুর্গোৎসবের সূচনা করেন৷ 

রায়গঞ্জ ব্লকের কমলাবাড়ী ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা মেহেন্দি গ্রামে শুরু থেকেই দুর্গাপুজোতে হিন্দু-মুসলিম সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষই অংশগ্রহণ করছেন। এবছরও একই ভাবেই আয়োজিত হচ্ছে এখানকার পুজো। ৪০০ টা শরৎ পেরিয়ে গেলেও এই পুজোর জৌলুসতা এতটুকুও কমে যায়নি। এই পুজোকে ঘিরে গ্রামবাসীদের উচ্ছ্বাস চোখে পড়ার মতো। এখানকার পুজো দেখলে মনে হবে কোনো এক শান্তির স্বর্গে যেন আমরা ঢুকে পড়েছি। 

দুই সম্প্রদায়ের মানুষের উদ্যোগেই যেহেতু প্রথম থেকেই পুজো হয়ে আসছে তাই পুজো কমিটি গঠনেও নেই কোনো সাম্প্রদায়িক বেড়াজাল। এলাকার উভয় ধর্মাবলম্বী মানুষই মিলিতভাবে উৎসবের আনন্দে পুজো কমিটি বানিয়ে পুজো সুসম্পন্ন করেন৷ পুজোর দিনগুলোতে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই নিরামিষ ভোজন করেন৷ কেবল ধর্ম নয়, মানবিক মিলনই হয়ে উঠেছে উত্তর দিনাজপুরের মেহেন্দী গ্রামের দেবী আরাধনার প্রধান অর্ঘ্য।  

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments