চৈনিক পণ্যের সাথে লড়াই করছে বাংলার শিল্পীদের হাতে গড়া প্রদীপ ও মোমবাতি
সামনেই দীপাবলি। বাঙালি সমাজ মেতে উঠবে আলোর উৎসবে। আলোর এই উৎসবকে আলোকিত করতে যারা কাজ করেন তারা হলেন প্রদীপ শিল্পী, আলোক শিল্পী ও মোম শিল্পীরা। দীপাবলির আনন্দে লোকে এদের কথা ভুলে যান। অথচ এঁরা না থাকলে আলোর উৎসবটা আলোকিত হয়না। আজকাল বাংলার প্রদীপ শিল্পী, আলোক ও মোম শিল্পীদের আর্থিক মূল্য দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। পুঁজিপতিদের চাপে এদের জোর করে হারিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এদের তৈরি করা পণ্যের বিক্রিও এখন কমে যাচ্ছে। লকডাউনে চিত্রটা আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এ বছর হয়তো বাজারটা গতবছরের থেকে ভালো হবে, তবুও তাদের গৌরবময় দিনগুলো ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
বাংলার শিল্পীদের হাতে গড়া প্রদীপ ও মোমবাতির বিক্রি কমে যাওয়ার পিছনে দায়ী নানান চৈনিক পণ্য। তাদের তৈরি করা প্রদীপ, টুনি বাল্ব ও মোমবাতি যেদিন থেকে বাংলার বাজারে ঢুকে পড়েছে সেদিন থেকেই স্থানীয় মানুষদের তৈরি পণ্য প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না চৈনিক পণ্যকে। বাংলার মানুষ ভুলে যাচ্ছেন যে চৈনিক পণ্যগুলোর থেকেও প্রদীপ, মোমবাতি জাতীয় স্থানীয় পণ্যগুলো অনেক বেশি মৌলিক ও দীর্ঘস্থায়ী।
প্রদীপ বা মোমবাতি তৈরি করতে যে খরচ হয় তার দ্বিগুণ রোজকার করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাংলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের৷ সারা বছর দীপাবলির একটা সময়ের জন্য তারা সকলেই মুখিয়ে থাকেন। অপেক্ষা করে থাকেন দীপাবলির তিনটি দিনের জন্য। সেই অপেক্ষা আজ খুব একটা সার্থকতা পাচ্ছে না। তবুও একবুক আশা নিয়েই পণ্য নির্মাণ করছেন তারা৷ চৈনিক পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় লড়াই করা এমনিতেই কঠিন৷ যার বড়ো কারণ হলো চৈনিক পণ্যগুলো নিয়ে যে পরিমাণ মার্কেটিং হয়, বাংলার স্থানীয় পণ্যগুলো নিয়ে ততটা মার্কেটিং হয়না বললেই চলে।
বাংলার প্রদীপ ও মোমবাতি শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শিল্পীদের মনে খানিকটা সংশয় তৈরি হয়েছে, তাই তারা নতুন কিছু উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে। যেমন বাঁকুড়ার পাঁচমুড়ার টেরাকোটা শিল্পীরা টেরাকোটার প্রদীপ ও টেরাকোটার মোমদানি তৈরি করে প্রতিযোগিতায় সফল হচ্ছে। গ্রাম-বাংলার অনেক জায়গাতে প্যাকেজিং-এর ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। মানুষকে চিত্তাকর্ষক করে তুলতে রকমারি সাজে বহু শিল্পী যে প্রদীপ ও মোমবাতি বানাচ্ছেন তা অনেকটা রমরমিয়েই বাজার মাত করছে।
প্রধান যে সমস্যায় স্থানীয় প্রদীপ ও মোমবাতি শিল্পীদের পড়তে হচ্ছে তা হলো ইনভেস্টমেন্টে কিছুটা জোর দিতে পারছেন না অনেকে। কোনো কারণে তৈরি করা পণ্যের সিকিভাগ বিক্রি না হলে আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে যায়। অনেক সময় কেবল তৈরি করার খরচটাই শুধু ওঠে। আয় সেই অর্থে হয়না। অতএব পণ্যগুলি বিক্রির হার বাড়াতে হলে তার প্রচার ও প্রসার প্রয়োজন। প্রশাসনিক সহায়তা প্রয়োজন। বাংলার প্রদীপ ও মোমবাতি শিল্পকে বাঁচানোর জন্য সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সঠিক আয় হয়না বলে অনেক শিল্পী নিজের পেশা ত্যাগ করে অন্য পেশাতে মনোনিবেশ করছেন।
চলতি বছরের দীপাবলিতে আমাদের প্রতিটি বাঙালির কর্তব্য স্থানীয় শিল্পীদের প্রদীপ ও মোমবাতি কেনা৷ আমাদের মতো প্রতিটি বাঙালিই পারে চৈনিক পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় বাংলার প্রদীপ ও মোমবাতিকে জয়ী করাতে। তাই এবারের দীপাবলি উদযাপন হোক বাঙালির নিজস্ব প্রদীপ ও মোমবাতি কেনার মধ্য দিয়ে।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment