পুজোতে এনাকোন্ডার দেশ তৈরি করলো আমলাশুলি সার্বজনীন দুর্গোৎসব
পুজো পুজো গন্ধ নিয়ে, নতুন গানের ছন্দ নিয়ে শারদীয়ায় খুশীতে মন নাচে। পুজো তো এসেই গেল। আকাশ-বাতাস তাই সেজে উঠেছে রামধনুর সাত রঙে। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর জন্য বছরভর অপেক্ষার যবনিকা পতন ঘটলো বলে। বাংলার গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র খুশীর জোয়ার বইতে চলেছে। দীর্ঘ মহামারির দুঃসময় পেরিয়ে শুভ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমরা।
পবিত্র এই উৎসব উপলক্ষে বাংলার নানা প্রান্তে মহা সাড়ম্বরে আয়োজিত হচ্ছে দুর্গাপুজো। পিছিয়ে নেই জঙ্গলমহলও৷ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আমলাশুলি গ্রামের পুজো টেক্কা দিচ্ছে মেদিনীপুর ও খড়্গপুরের মতো শহরগুলিকেও। বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, ব্র্যান্ড, সংবাদপত্র ও বিশ্ব বাংলার বিচারে জেলার সেরার সেরা পুজোর শিরোপা অর্জন করে আসছে এই পুজো। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিগ বাজেটের পুজোগুলির মধ্যেও অন্যতম "আমলাশুলি সার্বজনীন দুর্গোৎসব।"
২০১১ সাল থেকে থিমের পুজো বানিয়ে জেলাবাসীদের তাক লাগাচ্ছে আমলাশুলি সার্বজনীন দুর্গোৎসব। নিত্যনতুন থিমের চমক বানিয়ে নজর কাড়ছে এই পুজো কমিটি৷ এ বছর তাদের থিম "ছুটির দিনে এনাকোন্ডার দেশে।" চলতি বছরে ৩৫ তম বর্ষে পদার্পণ করছে এই পুজো। সমস্ত বিধিনিষেধ ও সরকারি নির্দেশিকা মেনে সম্পন্ন হচ্ছে সমগ্র পুজো।
কাপড়, থার্মোকল, টিস্যু পেপার ও বাহারী মোড়কে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্র, জাহাজ ও আমাজন জঙ্গলের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপের মাধ্যমে। মণ্ডপশিল্পীদের শৈল্পিক স্পর্শে সেজে উঠেছে মণ্ডপের পুরো শরীর। মণ্ডপের ভেতরে প্রবেশ করলে দর্শনার্থীদের চোখ আটকে পড়বে নানান কারুকার্যের দিকে৷ জঙ্গলের বিভিন্ন দৃশ্য, বন্যপ্রাণী ও ভাস্কর্যের অপূর্ব মেলবন্ধনে সোনায় সোহাগা হয়ে উঠেছে মণ্ডপটি। যা দেখামাত্রই সকলের চোখের খিদে প্রচণ্ড পরিমাণে বেড়ে যাবে। গোটা মণ্ডপটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দর্শন করলে মনে হবে এ যেন এক রূপকথার মায়াবী প্রদেশে আমরা ঢুকে পড়েছি।
অভিনবত্বে ভরা অসাধারণ এই পুজোমণ্ডপের নির্মাতা হলেন চন্দন পৈড়া। থিম সৃজনে অমিত শিট। মণ্ডপের পাশাপাশি প্রতিমাতেও থাকছে নতুনত্ব। দেবী দুর্গার এক অনন্য রূপকে অন্য ভাবনায় এখানে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে৷ প্রতিমার সৌন্দর্য আট থেকে আশি সব বয়সের মানুষজনকে মুগ্ধ করবে। প্রতিমাটি নির্মাণ করেছেন মৃৎশিল্পী সুধাংশু সাউ।
মণ্ডপ, প্রতিমার মতো আলোকসজ্জাতেও থাকছে চমকপ্রদ আকর্ষণ। বাংলার ফ্রান্স চন্দননগরের রঙবেরঙের আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়েছে গোটা গ্রাম। এখানকার পুজোর জৌলুস একেবারেই আলাদা। পুজোতে পুরো গ্রাম যেন এক পৃথক চেহারা নেয়। সারাবছর ধরে গ্রামবাসীরা অপেক্ষা করে থাকেন এই পুজোর জন্য। দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষজনও ছুটে আসেন আমলাশুলি সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজো দেখতে। পঞ্চমী থেকে দশমী টানা ছয়দিন এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নামে। আমলাশুলি সার্বজনীন দুর্গোৎসবের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো পুজো কমিটি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে শান্তিপূর্ণ ভাবে দুর্গাপুজো পরিচালনা করে। মানুষজনের ভিড়কে এই পুজো কমিটি যেভাবে সুস্থভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তা বেশ প্রশংসনীয়। আমলাশুলি সার্বজনীন দুর্গোৎসব নিয়ে প্রচণ্ড আশাবাদী উদ্যোক্তারা।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment