করোনা আবহে বিদেশে বেড়েছে বাংলা ভাষা শিক্ষার প্রসার
তথাকথিত স্মার্টনেস দেখাতে গিয়ে বাঙালি ভুল যাচ্ছে বাংলা ভাষাকে। অনেকে বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করা নিয়েও হাসিঠাট্টা করেন। অধিকাংশ বাঙালি বাংলা ভাষাকে ভুলে কেবল ইংরেজির পিছনেই ছুটে চলেছে৷ আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজিও যেমন আমাদের জানতে হবে মাতৃভাষা হিসেবে তেমনই আমাদের বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব দেওয়ারও প্রয়োজন আছে। বাঙালি নিজভূমেই যখন বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তখন এর বিপরীত স্রোতে হাঁটছেন বিদেশে বসবাসকারী অনাবাসী বাঙালিরা৷ কোভিড পরিস্থিতিতে ঘরবন্দী শিশু-কিশোরদের বাংলা ভাষা শিক্ষা দিতে চালু হয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ। তার মাধ্যমেই ভিনদেশী বাঙালি ছেলে-মেয়েদের অনলাইনে বাংলা শেখাচ্ছেন বাঙালি তরুণ-তরুণীরাই।
দুবাইতে বসবাসকারী বাঙালি সুলগ্না দেবনাথ। তাঁর স্বামী এক বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত। সুলগ্না দেবনাথ জন্মসূত্রে রানাঘাটের বাসিন্দা। তিনি এক বছর যাবৎ 'টিউশন' নামে একটি এডুকেশন অ্যাপ পরিচালনা করছেন৷ যে অ্যাপটিতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী-সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বাঙালি ছেলেমেয়েদের অনলাইনে বাংলা ভাষা শেখানো হচ্ছে। বাংলায় কথা বলা ও লেখা দুই-ই শেখানো হচ্ছে।
কোভিড শুরু হওয়ার পর লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় সুলগ্না দেবনাথ দেখেন, ছেলেমেয়েরা বাড়িতে থাকার জন্য কোথাও বেরোতে পারছে না। তাদের পড়াশোনারও ক্ষতি হচ্ছে। এমতাবস্থায় তাঁর একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার আইডিয়া আসে৷ তাঁরা অন্যান্য বিষয়ের সাথে সাথেই বাংলা ভাষা শিক্ষার কোর্সও চালু করেছেন। অনেকেই তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন।
এই প্ল্যাটফর্মটির আরেক উদ্যোক্তা সঞ্জয় বর্মন দেখেছেন বিদেশে স্কুলের ছুটি পড়লে ছেলেমেয়েদের কম্পিউটার ও ছবি আঁকা প্রভৃতি কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস কোর্সে ভর্তি করার চল আছে। সর্বত্র বাংলা ভাষা শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা নেই। আগে যেসব বাঙালি ছেলেমেয়েরা ঠাকুরদা ও ঠাকুমাদের সাথে বাংলায় কথা বলতে অক্ষম ছিল, সেখানে তাঁদের এই অনলাইন কোর্সে ভর্তি হওয়ার পর তারা বাংলা ভাষায় তুখোড় হয়ে উঠছে।
ঈশিতা চট্টোপাধ্যায় নামের এক বাঙালি মহিলা যার জন্ম দিল্লিতে কিন্তু বর্তমানে দুবাইয়ের বাসিন্দা। তিনি নিজে বাঙালি হয়েও বাংলা জানেন না অথচ তার মেয়েকে তিনি বাংলা ভাষার এই অনলাইন কোর্সে ভর্তি করেছেন। তিনি অনেক আগেই নিজের মেয়েকে বাংলা শেখাতে পারতেন যেহেতু দুবাইয়ের কোনো স্কুলে বাংলা শেখানো হয় না তাই সম্ভব হয়নি। আর এখন বাংলা ভাষার এই অনলাইন কোর্সে তার মেয়ে দ্রুততার সাথে বাংলা শিখে ফেলছে৷
নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরের বাঙালি বাসিন্দা অরীন্দ্র চক্রবর্তী দেখেছেন করোনার সময় থেকে নেদারল্যান্ডসে বসবাসকারী বাঙালি ছেলেমেয়েদের বাংলা শেখার একটা ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে। সেখানে অনেকগুলো অ্যাপ ও অনলাইন কোর্সও চালু হয়েছে। অনেক বাঙালি ছেলেমেয়েরা তাতে ভর্তিও হচ্ছে। তার ছেলের বয়স ৫ বছর। তিনি ইউটিউব ও অনলাইনে ছেলেকে বাংলা শেখাচ্ছেন। জানা গেছে নেদারল্যান্ডসের নিয়মই হচ্ছে আগে মাতৃভাষা শেখা। তার ছেলে কতটা মাতৃভাষা রপ্ত করেছে তা বোঝার জন্য নেদারল্যান্ডস সরকারের ল্যাঙ্গুয়েজ কনসালট্যান্ট বাড়িতে এসে পরীক্ষা পর্যন্ত নিয়েছে।
আয়ারল্যান্ডে দিন দিন বাড়ছে বাঙালির সংখ্যা৷ যে সকল বাঙালি সেখানে আইরিশ নাগরিকত্ব পেয়েছেন তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ছিল তারা তাদের সন্তানদের মাতৃভাষা শেখাতে পারবেন কিনা। বাংলা ভাষা শেখার তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দুশ্চিন্তা যেন কিছুতেই কাটছিল না। গত বছর করোনার আবহেই বাংলা ভাষা শিক্ষার অনলাইন স্কুল 'বাংলা পাঠশালা' চালু হয়। যে অনলাইন স্কুলের মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডে প্রথমবার বাংলা ভাষা শিক্ষার ক্লাস শুরু হয়েছে।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment