প্রতিবন্ধকতা জয় করে প্যারা-অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জিতেছেন বঙ্গসন্তান মনোজ সরকার
টোকিও প্যারা-অলিম্পিকে প্রথম বাঙালি হিসেবে পদক জিতেছেন মনোজ সরকার। ব্যাডমিন্টনে ব্রোঞ্জ জিতে নিলেন তিনি। ব্রোঞ্জ মেডেল ম্যাচে তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন জাপানের দাইসুকে ফুজিহারা। প্রথম গেমে দুই শাটলারের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়৷ শেষ পর্যন্ত ২২-২০ ব্যবধানে প্রথম গেম জেতেন তিনি৷ দ্বিতীয় গেমে খুব একটা লড়াই করতে হয়নি তাঁকে। ২১-১৩ ব্যবধানে গেম জিতে স্ট্রেট সেটে ম্যাচ জিতে পদক জয় নিশ্চিত করেছেন মনোজ সরকার।
মনোজ সরকার বাঙালি হলেও তাঁর জন্ম উত্তরাখণ্ডে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন রংমিস্ত্রি। কর্মসূত্রে বছর চল্লিশ আগে স্থানান্তরিত হন সেখানে। পরবর্তী কালে এখানেই বিয়ে করে সংসার পাতেন তিনি। অল্প বয়সেই শারীরিক অসুস্থতার কারণে কাজ করার মতো শক্তি হারিয়ে ফেলেন তাঁর বাবা৷ এরপর থেকে তাঁদের পরিবারে আর্থিক সমস্যা চরম আকারে দেখা দেয়। তিন বেলা খাবার জোটানোর পয়সা ছিল না তাঁদের কাছে। একদিকে সংসারের খরচ অন্যদিকে তাঁর বাবার চিকিৎসার খরচ, এই দুই সমস্যা সামলাতে গিয়ে বহু কষ্টে তিনি দিন কাটাতে থাকেন।
মনোজ সরকারের বয়স যখন ছিল মাত্র এক বছর তখন ভুল চিকিৎসার জন্য খেসারত দিতে হয়েছিল তাঁকে। কোমর থেকে তাঁর শরীরের নীচের অংশ পঙ্গু হয়ে পড়েছিল। তারপর তাঁর সঠিক চিকিৎসা করা হলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান ঠিকই কিন্তু তাঁর ডান পায়ের সক্ষমতা কমে যায়। যদিও এখানেই দমে যাননি তিনি। হার না মানা মানসিকতা নিয়ে তিনি লড়াই করতে থাকেন। আজকে টোকিও প্যারাঅলিম্পিকে ব্যাডমিন্টনের সিঙ্গলস বিভাগে ব্রোঞ্জ জয় করার পর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়লো তাঁর নাম।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিনি প্রথম সাফল্য পান ২০১৬ সালে। সেই বছর এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের এসএল-থ্রি সিঙ্গলসে তিনি স্বর্ণপদক জিতে নেন। ব্যাটমিন্টনে সেরা অবদান রাখার জন্য ২০১৮ সালে তিনি অর্জন করেন অর্জুন পুরস্কার। এমনকি ২০১৯ সালে বছরের সেরা স্পোর্টসম্যানের খেতাবও জেতেন তিনি।
তিনি দারুণ সাফল্য পেলেও বাড়ির আর্থিক সংকট এখনও মেটেনি৷ বর্তমানে তাঁর মা ক্যান্সার আক্রান্ত। বছরখানেক আগে তিনি দুঃখের সঙ্গেই জানিয়েছিলেন যে প্যারা-অ্যাথলিটদের জন্য কোনোরকম অনুদানের ব্যবস্থা রাখেনি উত্তরাখণ্ড সরকার। যার ফলে খেলার সমস্ত খরচ জোগানো তাঁর কাছে যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ছিল৷ বাংলাতে থাকতে না পারার জন্যও তিনি সম্প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বাঙালির অলিম্পিক ও প্যারা-অলিম্পিকে পদক না পাওয়ার যে বেদনা ছিল সেই বেদনা একটু হলেও তিনি মেটালেন৷ বাংলা ভাষাকেও তিনি প্রচণ্ড ভালোবাসেন। বাংলা ভাষাকে নিয়ে তিনি গর্ববোধ করে থাকেন৷ তিনি প্রবল আশাবাদী যে ভবিষ্যতে বাঙালিদের কাছে তিনি বিপুল জনসমর্থন পাবেন৷
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment