গত ১৯ বছর ধরে বেহালার সুরেই শহরবাসীকে মাতিয়ে রেখেছেন স্বপন শেঠ
বছর ৭৭ এর স্বপন শেঠ, বলরামদেব স্ট্রিটের বাসিন্দা, গত ১৯ বছর ধরে শহরবাসীকে বেহালার সুরে মাতিয়ে রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন। ২০০২ সালে তাঁর স্ত্রীর জরায়ুতে ক্যান্সার আক্রান্ত হলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ তিনি বেহালায় সুর করেই চালাবেন। তারপর থেকেই শহরের বিভিন্ন জায়গায়, কখনো গাছ তলায়, রাস্তার ধারে, আপন-মনে বেহালা বাজিয়ে গেছেন। এমন মনভোলানো সুর ব্যস্ত শহরের সময়কেও থমকে দেয়, অফিস ফিরতি ক্লান্ত মানুষ যেন সুরের মাঝে একটু শান্তি খুঁজে পায়।
গত কয়েক বছরে কলকাতা ছাড়াও তিনি দিল্লি, জয়পুর, মুসৌরি এর মতো বিভিন্ন শহরে ঘুরেছেন। তেমনি কয়েক বছর আগে দিল্লির এক পুরানো কফি হাউসে ভায়োলিনের সুর তুলেছিলেন, আর সেখানেই তিনি নজরে আসেন প্রয়াত ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের উপদেষ্টা সৃজন পাল সিংহের। তিনি যেন তাঁর জীবনের এক আশ্চর্য জীন। সৃজন বাবু আব্দুল কালাম এর একটি উদ্ধৃতি দিয়ে স্বপন বাবু একটি ভিডিও শেয়ার করেন সোশ্যাল মিডিয়ায় এরপর রাতারাতি ভাইরাল হন স্বপন বাবু।
এরপর থেকেই সময়ের চাকা গড়িয়েছে বেশ খানিকটা। স্বপন বাবু এখন বেশ পরিচিত। ২০১৯ সালে তার স্ত্রী ক্যান্সারমুক্ত হন। শুধু এক হয়ে যায় তার পরনের সাদা ধুতি পাঞ্জাবি। বার্ধক্য এর জন্য চামড়া ঝুলে পড়েছে, শক্তিও আগের থেকে কমেছে। কিন্তু স্বপন বাবুর নিয়মের আর আত্মবিশ্বাসের কোন পরিবর্তন ঘটে না। বুড়ো হাড়ে জোর না থাকলেও পুরানো ভায়োলিনের সুর একই রয়ে যায়। খারাপ ভালো অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয় তাঁর ঝুলিতে।
স্বপন বাবুর দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে নিজের বাড়িতে তিনতলার ছোট্ট ঘরের স্টুডিওতে। বেহালা বাজানোর পাশাপাশি ছবি আঁকা, মূর্তি বানানো তাঁর নেশা।
বিদেশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে গান, নাচ, নাটক করা খুব স্বাভাবিক হলেও দেশের মাটিতে স্বপন বাবু ব্যতিক্রম সেজন্যই তিনি কিছুদিন চাকরি করার পর ছেড়ে দিয়ে স্বাধীনভাবে নিজের মতো বেহালা বাদক হিসেবে জীবন যাপন করেন। উপার্জিত অর্থে স্বামী-স্ত্রীর দিব্যি চলে যায়।
স্বপন বাবু মনে করেন শিল্পের সাথে মাটির যোগ রয়েছে। অর্থ নয় শিল্পের কদরই এর একমাত্র পারিশ্রমিক। অতিমারির এই সময়ে ভ্যাকসিনের থেকেও নাকি গুরুত্বপূর্ণ হলো সংগীত। একমাত্র সংগীত-ই পারে মানুষের মন ভালো করতে।
প্রতিবেদন- পৌলমী হালদার
Post a Comment